বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- লোকসভা ভোটের দিন এগিয়ে আসতে না আসতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজনৈতিকদলগুলি। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ। আর তাই রাজনৈতিক লড়াই ক্রমশই সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে। যে যেখানে ক্ষমতাবান সে সেখানে বিরোধীদের দমানোর জন্য হাতিয়ার তুলে নিতেও পিছপা হচ্ছে না। শনিবার পরপর দুটি ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়ল। শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়াল লিখন করায় তৃণমূল কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে পুর্ব বর্ধমান জেলার গলসী ১ নম্বর ব্লকের শিড়রাই গ্রামে। শনিবার সকালে তৃণমূল কর্মীরা শিড়রাই গ্রামে দেওয়াল লিখন করে। পরে সন্ধ্যার সময় ৫ জন তৃণমূল কর্মীরা চায়ের দোকানে বসে চা খাবার সময় আচমকা সিপিএমের সমর্থকরা তাঁদের ওপর চড়াও হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। আহত তৃণমূল সমর্থক সেখ কুতুব জানিয়েছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই জনা কুড়ি সিপিএম সমর্থক রড, লাঠি দিয়ে তাঁদের ব্যাপক মারধর করতে শুরু করেন। কয়েকজন পালিয়ে গেলেও তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি জায়গায়। সেখানে তাঁকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারা হয়। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে পুরষা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনের মুখে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গলসী এলাকা। যদিও এব্যাপারে সিপিএমের গলসী এরিয়া কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তাফা জানিয়েছেন, এই ঝামেলার সঙ্গে সিপিএম এর কোন যোগ নেই। এটা তৃণমূলের নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি বাইরে ছিলেন। এব্যাপারে গলসী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। এখনও কোনো গ্রেপ্তারের খবর নেই। অন্যদিকে, ভাতার থানার আমারুন গ্রাম পঞ্চায়েতের আড়া গ্রামের বাসিন্দা বিজেপির মণ্ডল সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণকালী সামন্তকে গুলি করার খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আহত বিজেপি নেতাকে প্রথমে ভাতার হাসপাতাল এবং পরে শনিবার গভীর রাতেই তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত নেতা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে তিনি বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন। সেই সময় একটি মোটরবাইকে ৩জন আসেন এবং তাঁকে লক্ষ্য করে দু রাউণ্ড গুলি ছোঁড়ে। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও অন্য গুলিটি তাঁর বাঁ হাতে লাগে বলে জানিয়েছেন কালীকৃষ্ণবাবু। তিনি দাবী করেছেন, এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলেরই হাত রয়েছে। বিজেপি এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর জন্যই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। এদিকে,বিজেপি নেতাকে গুলি চালানোর খবর পৌঁছাতেই রবিবার সকালে বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজার, রাণীগঞ্জ বাজারে প্রচারে বের হওয়া বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দরজিত সিংহ আলুওয়ালিয়া বর্ধমান হাসপাতালে আহত বিজেপি নেতাকে দেখতে হাজির হন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এব্যাপারে তিনি রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। সুরিন্দরজিত সিংহ আলুওয়ালিয়া জানিয়েছেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস না থাকার জন্যই তৃণমূল কংগ্রেস এভাবে আক্রমণ করছে। যদিও এদিন বিজেপি নেতার ওপর গুলি চালানোর এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ সাফ জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল মোটেই জড়িত নয়। এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত হলেই সব প্রকাশিত হবে। অপরদিকে, আদৌ বিজেপি নেতার ওপর গুলি চালানো হয়েছিল কিনা তা নিয়েই রীতিমত ধন্দ তৈরী হয়েছে। খোদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সক সূত্রে জানা গেছে, বিজেপি নেতার ক্ষতস্থানের এক্সরে করা হয়েছে। তাঁর ক্ষতস্থান পরীক্ষা করে দেখাও হয়েছে। কিন্তু সাধারণত গুলি লাগার জন্য যে ধরণের ক্ষত হওয়ার কথা তার কোনো প্রমাণই মেলেনি। আঘাতের চিহ্ন দেখে চিকিত্সকদের অনুমান অন্য কোনোভাবে তিনি আহত হয়ে থাকতে পারেন।
Tags Firing firing by the miscreants
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …