বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা দেশ জুড়ে যখন আর জি কর কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় পরিস্থিতি। তখন খোদ বর্ধমানের বড়নীলপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা আকাশ চক্রবর্তীর লেখা গান ও সুর এখন ভারত বাংলাদেশে বিশেষ করে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১২ বছর আগে তাঁর লেখা গান – “চিৎকার কর মেয়ে, দেখি কতদূর গলা যায়, আমাদের শুধু মোমবাতি হাতে নীরব থাকার দায়।” -এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। আর জি কর কাণ্ডের পর এই গানকেই এখন প্রতিবাদের মুখ্য ভাষা হিসাবে ব্যবহার করছেন নেটিজেনদের একাংশ। খোদ গানের লেখক আকাশ জানিয়েছেন, প্রায় ১২ বছর আগে এই গান তিনি লেখেন। তাঁর এই গান বাংলাদেশ-সহ ভারতে অনেক গায়কই গেয়েছেন। বাংলাদেশের সরকারি টিভি চ্যানেল বিটিভি-তেও তাঁর এই গান ব্যবহার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আকাশ বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের পরে যাদবপুর থেকে পড়াশোনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর নেশা গান লেখা, সুর দেওয়ার চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ‘ভুবন মাঝি‘ চলচ্চিত্রে তাঁর লেখা গান “পদ্মা নদীর নৌকা ভিড়লো“-য় কন্ঠ দিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সবকিছুকে সম্ভবত ছাপিয়ে তাঁর এই গান – “চিৎকার কর মেয়ে, দেখি কতদূর গলা যায়” এখন অন্যতম চর্চার বিষয়। এমনকি স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের রাতে গোটা বাংলা জুড়ে মহিলারা যে রাত দখলের ডাক দিয়েছেন, সেখানেও অনেকেই ব্যবহার করছেন বর্ধমানের ছেলে আকাশের লেখা ও সুর করা এই গানকেই প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে। আকাশ জানিয়েছেন, কলকাতার পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের পর তিনি এই গান লেখেন। এরপর দিল্লীতে নির্ভয়া কাণ্ডের পর একটি বেসরকারী চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই এই গান গেয়েছেন। পরবর্তীকালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গণসংগীতের একটি অ্যালবামে এই গানটিকে রাখে। সেখানে এই গানটির জন্য কন্ঠ দিয়েছেন শিল্পী ডোনা গুপ্ত। এরপরে তিনি এবং ডোনা গুপ্ত একাধিক স্টেজে এই গান গেয়েছেন। আকাশ জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তিনি জানতে পারেন, বাংলাদেশে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচীতে তাঁর এই গান গাওয়া হয়েছে। এমনকি দেওয়াল লিখনেও এই গানের লাইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচীর শিরোনামও হয়েছে তাঁর গানের লাইন ‘চিৎকার কর মেয়ে’। বছরখানেক আগে বাদ্য যন্ত্রের কিছু পরিবর্তন এনে আকাশ এই গান নিজেই গেয়েছেন ‘হাওয়া বদলের গান’ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য। পুরনো এবং নতুন আঙ্গিকে গাওয়া গান এখন আর জি কর কাণ্ডের ঘটনায় আবার ব্যবহার হচ্ছে। একজন শিল্পী বা লেখক হিসাবে এটা যেমন তাঁর ভাল লাগছে ঠিকই, কিন্তু যে ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু মোটেও আনন্দের নয়। তিনি চান, মানুষ এগিয়ে আসুক, মানুষ জাগুক, প্রতিবাদে রাস্তায় নামুক। সেক্ষেত্রে তাঁর এই গানকে ব্যবহার করে মানুষ যদি জাগ্রত হয় তাহলে অবশ্যই সেটা তাঁর ভাল লাগবে। পাশাপাশি আকাশ জানিয়েছেন, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে তিনি নিজেও নিজের মত করে প্রতিবাদ করছেন।