গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জমির ক্ষতিপূরণের মামলায় আদালতে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ায় পূর্ব বর্ধমানের সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিক রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার নির্দেশ দিলেন বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা জজ শেখ মহম্মদ রেজা। সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালতে শপথ নিয়ে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে মিলেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা জজ। সে কারণে তার বিরুদ্ধে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন বিচারক। আইনজীবী রাজকুমার গুপ্ত বলেন, মিথ্যা হলফনামা দেওয়ায় সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনমাফিক মামলা রুজু হবে। বর্ধমানের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবেন।
২০০৫-০৬ সালে বর্ধমানের গোদায় স্যাটেলাইট টাউনশিপ গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। গোদার বাসিন্দা আব্দুল রহিম, আব্দুল আজিজ ও আব্দুল আলিমের ১ একর ৭৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। শতকপিছু ৫ হাজার ৮৮৬ টাকা দাম নির্ধারণ করে সরকার। তাতে আপত্তি জানিয়ে বর্ধিত দাম পেতে আদালতে মামলা করেন জমির মালিকরা। তাদের আইনজীবী অমিয় চৌধুরি বলেন, আদালত শতকপিছু ৩৫ হাজার টাকা দাম দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী, জমির মালিকদের পাওনা হয় ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়াও টাকা না মেটানো পর্যন্ত বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে বলে আদালত। ২০১২ সালে দাম মেটানোর জন্য নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু, এখনও সরকার সেই দাম মেটায় নি। বর্তমানে জমির মালিকদের সরকারের কাছে পাওনা হয়েছে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, জমির মালিকরা বর্ধিত মূল্য পেতে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু, এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী জমি অধিগ্রহণ আধিকারিক আদালতে হলফনামা দিয়ে জানান, হাইকোর্ট বর্ধিত মূল্য পাওয়ার মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে। যদিও জমির মালিকদের আইনজীবীরা আদালতে নথি পেশ করে জানান, এ ধরণের কোনও স্থগিতাদেশ হাইকোর্ট দেয়নি। উল্টে ক্ষতিপূরণের টাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা না পড়ায় হাইকোর্ট স্থগিতাদেশের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের কপিও আদালতে জমা দেন জমির মালিকদের আইনজীবী। তা দেখে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ার বিষয়ে সরকারী ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিকের ব্যাখ্যা তলব করেন প্রথম অতিরিক্ত জেলা জজ। ব্যাখ্যায় তিনি জানান, তার কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিলনা। দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি হলফনামা জমা দিয়েছেন। জমির মালিকদের হয়রান করার কোনও উদ্দেশ্য তার ছিল না। যদিও এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় আদালত। ব্যাখ্যা পেয়ে সিআরপিসির ৩৪০ ধারায় এমপি কেস রুজু করে তদন্ত করেন বিচারক। তাতে সরকারি স্তরে ক্ষতিপূরণের টাকা মেটানোয় সদিচ্ছার অভাবের কথা সামনে আসে। আদালতকে বিভ্রান্ত করতে সরকারি আধিকারিক মিথ্যা হলফনামা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হন বিচারক। এরপরই সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
Check Also
বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার যুবতী, গ্রেপ্তার ৫
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হলেন এক যুবতী। …