বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের রাধানগর প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে ঘটেছিল সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। দীর্ঘ প্রায় ৪৯ বছর পর মঙ্গলবার সকালে ফের আরও একবার লালপতাকার মিছিলে ভর্তি হয়ে গেল প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেন। সিপিএম বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবেই কাতারে কাতারে লালপতাকা কাঁধে সিপিএমের মিছিল এসে ঢুকেছিল প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনের কংগ্রেস পরিবার সাঁই বাড়িতে। এরপর পৈশাচিক উল্লাসে সিপিএমের সমর্থকরা ঢুকে পড়েছিলেন সাঁইবাড়িতে। বল্লমের ফলায় বিদ্ধ করে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছিল কংগ্রেস নেতা তথা সাঁইবাড়ির স্তম্ভ মলয় সাঁই, প্রণব সাঁই দুইভাইকে। ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে আত্মগোপনের চেষ্টা করেও মেলেনি জীবনদান। সেই সময় সাঁইবাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন রায় এসেছিলেন প্রাইভেট টিউশন দিতে। সিপিএমের উল্লাসবাহিনী তাঁকেও রেওয়াত করেনি। সাইঁবাড়ির ভিতর তিনজনকে খুন করে ১৭ মার্চের সকালকে লাল রক্তে মিশিয়ে দিয়ে গিয়েছিল সিপিএমের সমর্থকরা। এরপর অনেক ঘটনা ঘটেছে। একে একে নাম জড়িয়েছে সিপিএমের তাবড় তাবড় নেতাদের। যাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন আর জীবিত নেই। সম্প্রতি মারা গেছেন নিরুপম সেন। কিন্তু তবুও এখনও ভোটের রাজনীতিতে রয়ে গেছে সাঁইবাড়ির সেই ইতিহাস। গোটা দেশ জুড়ে নাড়িয়ে যাওয়া ঘটনার স্মৃতি। মঙ্গলবার আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরী বর্ধমান পুরসভার ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার চালালেন। এদিন সিপিএমের ৩নং লোকাল কমিটির পার্টি অফিস থেকে ভোটের প্রচার মিছিল শুরু করে শহরের তেলমারুই রোড দিয়ে সর্বমঙ্গলা মন্দির এলাকা, বিসিরোড, ষাঁড়খানা গলি, রাধানগর, ঢলদিঘী পাড়া পাড় হয়ে চলে আসে বর্ধমান শহরের রাধানগর পাড়ার সেই প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে আপাদমস্তক কংগ্রেস পরিবার সাইঁবাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে সিপিএমের দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মীরা সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেবার আবেদন নিয়ে যখন সাঁইবাড়ির সামনে দিয়ে গেলেন, তখন অনেক সিপিএম সমর্থকই কাঁধে লাল পতাকা নিয়েই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন ভেঙ্গে পড়তে থাকা সাঁইবাড়িকে। সাঁইবাড়ির গায়ে মাত্র ৯দিন আগে লাগানো হয়েছিল ‘রক্তাক্ত সাঁইবাড়ি‘ লেখা পোষ্টার। অনেকেই সেগুলি দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে শ্লোগান দিয়ে গেলেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ। অভিযোগ, প্রায় ৪৯ বছর আগে ঠিক এমন সময়েই ১৭ মার্চের সকালে এভাবেই সিপিএমের হাজারো সমর্থক ঘিরে ধরেছিল সাঁইবাড়িকে। সাঁইবাড়ির ভেতর রক্তের হোলি খেলে কোন্ অজানা নিশ্চিন্ত মনে তাঁরা চলে গেছিলেন। আর প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনের তত্কালীন বাসিন্দারা দীর্ঘদিন আতংকে দিন কাটিয়েছিলেন এই নারকীয় হত্যালীলার ঘটনায়। এই সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক বিচার চাওয়া হয়েছে। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসীন হবার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নতুন করে কমিশনও গঠন করেছিলেন। কমিশনে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন অনেকেই ৪৯ বছর আগে ঘটে যাওয়া বিচারের আশায়। কিন্তু সেই কমিশনের রিপোর্ট আজও দিনের আলো দেখেনি। কিন্তু তাতে কি? কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে না এলেও আজও সভা সমিতিতে বিশেষত বর্ধমান জেলায় সিপিএমের অত্যাচারের মাত্রা বোঝাতে নেতা–নেত্রীরা এখনও সেই সাঁইবাড়ির ঘটনাকেই তুলে ধরে চলেছেন। কয়েকদিন আগেই ১৭ মার্চের সেই দিনটি পালিত হয়েছে এই প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে। হাজির ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। হাজির ছিলেন সাঁইবাড়ির সদস্যরাও। আর মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান – দুর্গাপুর লোকসভা আসনের সিপিএম প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে কাঁধে লালপতাকা নিয়ে এই সাঁইবাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে চলে যাওয়া প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেন ধরে ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনিতে আওয়াজ তুলে চলে গেলেন প্রচারের অন্য রাস্তায়।