বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- চলতি বছরে আলু নিয়ে শুরু হয়ে গেল হাহাকার। সোমবার রাতে ব্যাপক শিলাবৃষ্টির সঙ্গে শুরু হওয়া দফায় দফায় ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে গোটা জেলাতেই আলু পচে নষ্ট হবার আশংকা দেখা দিল। একইসঙ্গে খোলাবাজারে রীতিমত আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। এমতবস্থায় সরকারকে এগিয়ে এসে পরিস্থিতি মোকাবিলার করার আবেদন জানাতে শুরু করেছেন আলু চাষীরা। এদিন গলসীর আলুচাষীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই আলু তোলার সময়। তারই প্রস্তুতি শুরু হওয়ার মধ্যেই গত দুইদিনের বৃষ্টি নষ্ট করে দিলো এলাকার আলু জমি। বিঘার পর বিঘা আলু জমি এখন জলের তলায়। গলসী ২ নম্বর ব্লকের মসজিদপুর অঞ্চলের এই চাষিরা এখন দিন রাত মাঠে জমে থাকা জল সরিয়ে আলু বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চালালেও কার্যত তাঁরা জানিয়েছেন, এটা বৃথা চেষ্টা। কারণ বৃষ্টি চলছেই। উল্লেখ্য, এদিনও আবহাওয়া দপ্তর থেকে এদিনও বৃষ্টি বন্ধের কোনো খবর ঘোষণা করেনি। বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বৃহস্পতিবার গড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চাষীরা। কার্যত গোটা জেলা জুড়েই আলু চাষের মাঠে চাষিদের দুঃখের মেলা চলছে। এলাকার সকল চাষি এখন জমির মাথায় শেষ সম্বল খুঁজতে দিশেহারা। চাষীরা এদিন জানিয়েছেন, এই আলু করতে অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কেউ কেউ মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। গত আমন ধান বিক্রির টাকার সঙ্গে ঋণের ওই টাকাও তাঁরা লাগিয়েছেন আলু চাষে। এবছর আলুর ফলন ভাল হওয়ায় অনেকেই সুদিনের আশা করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির রোষে তাঁরা এখন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। বাজারে দাম না থাকায় কাঁচা আলু তোলার ঝুঁকিও নিতে পারছেন না। কারণ আলু তোলার যা খরচ তা চলতি বাজারে আলু বিক্রি করেও পাবেন না। স্বাভাবিকভাবেই চাষীরা চাইছেন দ্রুত সরকার হস্তক্ষেপ করুক আলুচাষীদের স্বার্থে। এদিকে, এদিনই গলসীর আলুজমি পরিদর্শন করেন গলসী ২-এর বিডিও সরোজ কুমার ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। উল্লেখ্য, জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,গতবছর ২ কোটি ৪০ লক্ষ প্যাকেট আলু পূর্ব বর্ধমান জেলায় হিমঘরে রাখা হয়েছিল। উত্পাদন হয় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি প্যাকেট। এবারে যা হবার সম্ভাবনা প্রায় ৪ কোটি প্যাকেট। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার যে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু কেনার কথা বলেছেন তাতে গোটা রাজ্যের আলু চাষীদের কাছ থেকে এক বস্তা আলুও কিনতে পারবে না সরকার এমনটাই অভিযোগ করে বুধবার বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএমের কৃষকসভা। বস্তা পিছু আলুর দাম ন্যুনতম ৩৫০ টাকা করার দাবী সহ আলু চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি আলু কেনার দাবীতে সিপিএমের কৃষক সভার পক্ষ থেকে বুধবার পুর্ব বর্ধমানের ২ নং জাতীয় সড়কের আমড়া মোড়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনীও। যদিও এদিন জাতীয় সড়কে আলু ঢেলে দিয়ে বিক্ষোভের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে দেয়নি বিশাল পুলিশ বাহিনী। বর্ধমান সদরের ডেপুটি পুলিশ সুপার শৌভিক পাত্র ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এদিন আন্দোলনকারীদের জাতীয় সড়কে উঠতে দেওয়া হয়নি। কোনো অপ্রীতিকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়নি। অন্যদিকে, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য উদয় সরকার জানিয়েছেন, এবারে আলুর অত্যাধিক ফলন হলেও রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছেন মাত্র ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু কেনা হবে। কিন্তু তাঁরা দেখেছেন এর ফলে গোটা রাজ্যে যে সংখ্যক আলু চাষী রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এক বস্তা আলুও কিনতে পারবে না সরকার।তাই তাঁরা দাবী করেছেন ধানের মতই সরকার বস্তা পিছু ৩৫০টাকা দরে আলু কিনুক।
Tags minimum support price potatoes potatoes minimum support price
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …