Breaking News

বর্ধমান মহারাজ উদয়চাঁদ ভেবে তাঁর দাদুর মূর্তিতে মালা দিয়ে দিলীপের স্লোগান উদয়চাঁদ অমর রহে, বিতর্ক তুঙ্গে

Dilip Ghosh's slogan 'Udaychand Ammar Rahe' by garlanding Banbihari Kapoor's statue instead of Burdwan Maharaja Uday Chand

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমানের মহারাজা ভেবে বর্ধমান রাজ উদয়চাঁদ মহতাবের দাদুর মূর্তিতে মালা দিয়ে মহারাজ উদয়চাঁদ অমর রহে বলে স্লোগান দেওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্র করে। রবিবার সকালে বর্ধমানের জহুরী পট্টিতে চা চক্রে অংশ নেন দিলীপবাবু। বর্ধমান রাজবাড়ির পূর্ব গেটের সামনে রয়েছে ‘রাজা বনবিহারী কাপুর’-এর আবক্ষ মূর্তি। এদিন সেই মূর্তিতেই মালা দেন দিলীপ ঘোষ। আর মালা দিয়ে ‘মহারাজ উদয়চাঁদ অমর রহে’ বলে স্লোগান দেন। কিন্তু এটা তো বনবিহারী কাপুরের মূর্তি। ভুল ধরিয়ে দিলে দিলীপ বলেন, এখানে আবার কাপুর এলো কোথা থেকে? দিলীপ ঘোষের এই মালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। Dilip Ghosh's slogan 'Udaychand Ammar Rahe' by garlanding Banbihari Kapoor's statue instead of Burdwan Maharaja Uday Chand
এই বিষয়ে ইতিহাস বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক শ্যামসুন্দর বেরা জানিয়েছেন, “নাম ‘রাজা বনবিহারী কাপুর’ হলেও তিনি বর্ধমানের রাজা ছিলেন না। মহতাবচন্দ্‌-এর দাদা রাসবিহারী কাপুর একসময় তাঁকে দত্তক নেন। পরবর্তী সময়ে নিজের পুত্র হলে কিছুটা অবহেলার শিকার হন। সে সময় মহতাবচন্দ্‌ তাঁকে রাজবাড়িতে নিয়ে আসেন। অল্প বয়স থেকে রাজপরিবারে মানুষ হওয়ার ফলে রাজপরিবারের ঐতিহ্য, পরিচালনা সম্পর্কে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন। মহতাবচন্দ্‌ তাঁর বিয়ে দেন এবং ‘বনাবাস কুঠি’ নির্মাণ করিয়ে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন। মহতাবচন্দ্‌-এর পর রাজা হন তাঁর দত্তক (শ্যালক বংশগোপাল নন্দের পুত্র) পুত্র আফতাবচন্দ্‌। আফতাবচন্দ্‌ মাত্র ২৪ বছর ৭ মাস বয়সে প্রয়াত হলে রাজকার্য পরিচালনার দায়িত্ব চলে যায় কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীনে। সেই পর্বে বনবিহারী কাপুর ছিলেন রাজপরিবারের জয়েন্ট ম্যানেজার। অবশ্য তাঁরই কর্তৃত্ব ছিল বেশি। ব্রিটিশরাজ তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করে। পরে আফতাবপত্নী বেনোদেয়ীদেবী বনবিহারীর পুত্র বিজনবিহারীকে দত্তক নেন এবং বিজনবিহারী বিজয়চন্দ্‌ মহতাব নামে রাজা হন। রাজকাছারি বাড়ি (বর্তমান ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর-এর অফিস) বনবিহারী কাপুরই নির্মাণ করিয়েছিলেন। এখানেই আছে তাঁর আবক্ষ প্রস্তর মূর্তি। কাছারিবাড়ির বেনসন ক্লক বসানো হয়েছিল তাঁরই তত্ত্বাবধানে।” Dilip Ghosh's slogan 'Udaychand Ammar Rahe' by garlanding Banbihari Kapoor's statue instead of Burdwan Maharaja Uday Chand
অন্যদিকে, বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ডক্টর সর্বজিৎ যশ জানিয়েছেন, বনবিহারী কাপুরের গলসির কাছে বাড়ি ছিল। তিনি প্রধানত জ্যোতিষী ছিলেন। বর্ধমান রাজপরিবারে তাঁর জ্যোতিষী হিসাবেই আগমন। তখন রাজা ছিলেন আফতাব চাঁদ। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। বনবিহারী কাপুরের সাথে তাঁর ৬ বছরের সন্তান রাজবাড়ীতে আসতো। আফতাব চাঁদের স্ত্রী বনবিহারী কাপুরের সন্তানকে ভালোবেসে তাঁকে দত্তক নেন। পরিবর্তে বনবিহারী কাপুরকে রাজবাড়িতে থেকে এস্টেট দেখাশোনার কাজ দেন। এই দত্তক নেওয়া সন্তান বিজয় চাঁদের জন্ম ১৮৮১ সালে। ১৮৮৭ সালে তাঁকে রাজা হিসাবে বসান হয়। কিন্তু তখন সে নাবালক ছিল, পরে ১৯০২ সালে সে সাবালক হন। নাবালক হিসাবে এই সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন তাঁর বাবা এস্টেট ম্যানেজার বনবিহারী কাপুর। পরবর্তী সময়ে বনবিহারী কাপুরের মৃত্যুর পর রাজবাড়িতে ওয়াচ টাওয়ারের সামনে তাঁর মূর্তিও বসান হয়। বর্ধমানের প্রথম ফুটবল লীগ বনবিহারী কাপুরের নামে চালু হয়। বিজয় চাঁদের পুত্র উদয়চাঁদ ১৯৪৩ সালে রাজা হন। সর্বজিতবাবু জানিয়েছেন, বনবিহারী কাপুর রক্তের সম্পর্কে বর্ধমান রাজ উদয় চাঁদের দাদু। Dilip Ghosh's slogan 'Udaychand Ammar Rahe' by garlanding Banbihari Kapoor's statue instead of Burdwan Maharaja Uday Chand
দিলীপ ঘোষের এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, বর্ধমানের ইতিহাস সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ কিছু জানেন না। যিনি গরুর দুধে সোনা পান তিনি কী বলবেন। তিনি বনবিহারী কাপুরকে রাজা হিসাবে চালিয়ে দেবেন। এটা ওনার পক্ষে সম্ভব। উনি মাঝে মধ্যেই এই ধরনের ভুল বকেন। বর্ধমানের ইতিহাসকে বিকৃত করলে বর্ধমানের মানুষ মেনে নেবেন না। এর আগেও এরা এই ধরনের কাজ করেছেন। ওনারা মনীষীদের চেনেন না। ওদের মিছিল থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়। পুরুলিয়ায়ও অন্য মূর্তিতে মালা দিয়ে বিরসা মুন্ডা বলেছেন। ইতিহাস আগে ভালো ভাবে পড়ুক, জানুক। তারপর বর্ধমানে রাজনীতি করুক। নাহলে বর্ধমানে যারা ইতিহাস চর্চা করেন তাঁরা দিলীপ বাবুকে মেনে নেবেন না। আমরা ধিক্কার জানাই। যতদিন উনি বর্ধমানে থাকবেন এই ধরনের ভুল করবেন, বর্ধমানের মানুষের সেটা সহ্য করতে হবে। যদিও এব্যাপারে দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
মালা বিতর্ক প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ওখানে যার মূর্তি ছিল তিনি বনবিহারী কাপুর। তিনিও রাজা ওখানকার, তিনিও সুশাসক ছিলেন। আমি ওই প্লেট পড়িনি, কিন্তু আমি তো বলিনি ওটা ওই রাজা উদয়চাঁদ। মহারাজ উদয়চাঁদ খুব স্বনামধন্য ব্যক্তি, তার নামে জয়ধ্বনি দিয়েছি।

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *