বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার সকাল থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই মেঘলা আকাশ। মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঝেই রীতিমত আতংকের মধ্যে রইলেন গোটা জেলার মানুষ। এদিনই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে চুড়ান্ত সতর্কতাও জারী করা হয়েছে। খোলা হয়েছে ফণী মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুমও (ফোন নং– ০৩৪২ ২৬৬৫০৯২)। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে এই কন্ট্রোল রুম। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ভারী ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে বর্ধমান জেলার ওপর। শুক্রবার রাতেই তা ধাক্কা মারতে পারে জেলায়। ইতিমধ্যেই জেলার সমস্ত ত্রাণকেন্দ্রগুলিকে খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রয়োজন হলেই দুর্গতদের পাঠানোর জন্য মহকুমা শাসক এবং বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি পুরনো ভগ্নপ্রায় বাড়ি থেকে সমস্ত বাসিন্দাদের সরে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি এদিন বর্ধমান পুরসভার পক্ষ থেকেও মাইকিং করে পুরবাসীদের সতর্ক করে দেওয়া চলছে। বাড়িতে পর্যাপ্ত জল ও খাবার মজুদ রাখার কথা বলা হয়েছে। ফণি ঢুকে পড়ার পর বিদ্যুতবাহী তারে হাত না দেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুরনো ও ভাঙাবাড়ি থেকে সকলকে সরে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ফণি নিয়ে এই আতংকের মাঝেই বৃহস্পতিবার থেকে জেলার চাষীরা বোরো ধান কেটে বাড়িতে তোলার জন্য যে যুদ্ধকালীন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন শুক্রবারও তা অব্যাহত রইল। কার্যত শুক্রবার ভোর থেকেই মাঠে মাঠে ধান কাটার কাজ করা হয়েছে। এদিন জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের আধিকারিক বামাপদ কুণ্ডু জানিয়েছেন, ফণির জন্য তাঁরা সবরকমের প্রস্তুতি তৈরী রেখেছেন। জেলা স্তরে দুটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। একটি বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের (০৩৪২ ২৬৬৫০৯২) এবং অন্যটি সিভিল ডিফেন্সের (০৩৪২ – ২৬৬৩৩২২)। সমস্ত ব্লক ও মহকুমা স্তরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলাস্তরে ১০জনের একটি কুইক রেসপন্স টিমকে তৈরী রাখা হয়েছে। যেখানেই প্রয়োজন হবে তাঁরা দ্রুত চলে যাবেন। প্রত্যেক ব্লক ও মহকুমা স্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রিপল ও চাল মজুদ করা হয়েছে। শুক্রবারই বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমায় ২০০০টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ মহকুমার জন্য প্রায় ৩০০ টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা, কালনা এবং কাটোয়া মহকুমাশাসকদের জানানো হয়েছে প্রয়োজনে ফেরিঘাট বন্ধ করার জন্য। উল্লেখ্য, এদিন বিকাল থেকেই কালনায় গঙ্গার ফেরিঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্তরকমের ছুটি বাতিল করে ব্লক ও মহকুমা স্তরের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ফণীর মোকাবিলায় জেলা পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে ৩টি কিউ আর টি টিম তৈরী করে রাখা হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর থেকেও একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অপরদিকে, জেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি মোবাইল ইউনিট তৈরী রাখা হয়েছে। ফণির জন্য সমস্ত রকম উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাতে পানীয় জলের কোথাও কো্নো সংকট দেখা না দেয় সেজন্য হরিণঘাটা এবং দক্ষিণ রাইপুর থেকে জলের পাউচ প্যাকেট নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও সরকারী প্রাণধারা পানীয়জল উত্পাদন সংস্থায় বড় মাপের বিশুদ্ধ পানীয় জলের বোতল তৈরী করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি সমস্ত পানীয় জল সরবরাহ কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুতের অভাব দেখা দিলে সেখানে যাতে ডিজি সেট দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখা যায় তারও বন্দোবস্ত করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সমস্ত জলের রিজার্ভারে জল মজুদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য দপ্তরের সমস্ত আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
Tags Cyclone Fani
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …