বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অবশেষে বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের দুই বিদায়ী সদস্য গোলাম জার্জিস এবং রুবী ধীবর। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের আউশগ্রাম-২ এর তপশীলি জাতি উপজাতি ও অনগ্রসর সেলের কার্যকরী সভাপতি অশোক মালাকার এবং বড়শুল জুট মিলের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ সিং। শনিবার কলকাতায় বিজেপির সদর দপ্তরে কৈলাশ বিজয়বর্গী তাঁদের হাতে বিজেপির দলীয় পতাকা তুলে দেন। হাজির ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় , রাহুল সিনহা প্রমুখরাও। একেবারেই কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদ থেকে রাজনীতির শুরু করেন গোলাম জার্জিস। ছাত্রপরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দাপিয়ে রাজনীতি করেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র গোলাম জার্জিস যুব কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেসের একাধিক পদেও ছিলেন। দফায় দফায় বাম রাজনীতির হাতে আক্রান্তও হয়েছেন। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী এলাকায় কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ তা- খুনের ঘটনায় অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পান। আত্মগোপন করে থাকতে হয় তাঁকে বেশিকিছুদিন। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস পত্তন করার সময় অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় যে ৪জন নেতা অগ্রণী ভূমিকা নেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন গোলাম জার্জিস। বাকি ৩জনেই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত ব্রাত্য হয়েই রয়েছেন। ইতিমধ্যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসনে জয়ী হয়ে গোলাম জার্জিস বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। কিন্তু তাঁকে দলীয়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয় একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে। যদিও গোলাম জার্জিস জানিয়েছেন, তাঁকে কি কারণে সরানো হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি রুবী ধীবরকেও প্রার্থী করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি গোলাম জার্জিসের অনুগামীরা। অনুগামীদের চাপে তিনি নির্দল হিসাবে মনোনয়নপত্র জমাও দেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশলী চাপে তিনি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। গোলাম জার্জিস জানিয়েছেন, খোদ দলের উর্ধতন নেতৃত্ব তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁকে দলে সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু হয়নি। কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে দফায় দফায় অপমানিতই করা হয়েছে। তাই তিনি দল ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি দলের হয়ে তিনি শুধু কাজই করবেন না। ইতিমধ্যেই বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের বিষয়ে তাঁকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। তিনি এরপর যতদিন বাঁচবেন বিজেপিই করবেন। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে কোনো মর্যাদাই দেয়নি। অন্যদিকে, গোলাম জা্র্জিস সহ এই ৪জন তৃণমূল নেতৃত্ব তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সম্পর্কে খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, ওই ৪জনের দলত্যাগে তৃণমূলের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি জানিয়েছে্ন, অনেক আগেই তারা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের দলের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে, বর্ধমান জেলা পরিষদের এক প্রভাবশালী নেতা জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যক্তি বিশেষের কোনো মূল্য নেই। মমতা বন্দোপাধ্যায়ই একমাত্র নেত্রী। কোটি কোটি মা মাটি মানুষের কর্মীই সম্পদ তৃণমূলের। সেখানে কে গেল তা নিয়ে কোনো প্রভাবই পড়বে না দলের ওপর।