Breaking News

স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ যেখানে, সেই জায়গাই এখন অনাদরে ভগ্নপ্রায়

 

বিপুন ভট্টাচার্য, গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের গলসী ২নং ব্লকের চান্না আশ্রম। বিপ্লবীদের পদধূলি ধন্য দুচালার ছোট্ট খড়ের চালের মাটির ঘর ধ্বসে পড়ার আগে কালের সাক্ষ্মী হিসাবে টিঁকে রয়েছে এখনও। এখন দেদার গরু, ছাগল, ভেড়া চড়ে বেড়াচ্ছে। কালের নিয়মে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বসে পড়ছে স্বাধীনতাত্তোরের জ্বলন্ত ইতিহাস। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার বীজ যেখানে নিহিত রয়েছে সেই জায়গাই এখন অনাদরে অবহেলায় ভেঙ্গে পড়ছে। এখনই সংরক্ষণে হাত না দিলে নবীন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই চান্না আশ্রমের পরিচালন কমিটি চাইছেন সরকার অধীগ্রহণ করুক এই আশ্রম। বাঁচিয়ে রাখুক স্বাধীনতার ইতিহাসকে। আশ্রমের বর্তমান পরিচালন কমিটির সদস্য অমল বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছে, এই আশ্রমে বসেই দেশের এই মহান স্বাধীনতা আনার বীজ বপন করেছিলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। আজ অনাদরে, কার্যত অবহেলায় ভগ্নদেহ নিয়ে কালের সাক্ষী দিয়ে চলেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই চান্না গ্রামের একপ্রান্তে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় তৈরী করেছিলেন এই আশ্রম। যার ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে নজরকাড়া। মনে করা হয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের সুবিধার জন্যই তত্কালীন এই নির্জন জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল ভেবে চিন্তেই। একদিকে গলসী থানা, অন্যদিকে আউশগ্রাম ও ভাতার থানার সীমানায় বসে গুপ্তভাবে এই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তাঁরা। আশ্রম মানে, দেশের স্বাধীনতার জন্য গোপন কার্যকলাপ চালানোর আস্তানা। প্রায় ২৫ বিঘে জমির ওপর তৈরী হয়েছিল একটি খড়ের চালের ঘর। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ থেকে উজ্জীবিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। কলকাতার মুরারীপুকুরে ব্রিটিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন যতীন্দ্রনাথ। পাঞ্জাবের গদর পার্টির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতেন এই আশ্রমে বসেই। বর্ধমানের এই চান্না আশ্রমে এসেছিলেন ভগত সিং, ভগত সি-এর বাবা কিষেণ সিং, লালা লাজপত রায়,নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপিন বিহীরী গাঙ্গুলী, রাসবিহারী বসু, জীবনতারা হালদার, যাদুগোপাল মুখোপাধ্যয়, সোহং স্বামী, তিব্বতি বাবা, প্রজ্ঞান পাদজী (যোগেশ্বর চট্টোপাধ্যায়), ফকির রায়, যাদবেন্দ্র পাঁজা, বিনয় চৌধুরীরর মত বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে তাঁরা দেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেছেন এই চান্না আশ্রমে বসে। তিনি জানিয়েছেন, বাম আমলে এই আশ্রমের জন্য একবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বেশীদূর এগোয়নি। বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে এই আশ্রমে একটি গেষ্ট হাউস করে দেওয়া হলেও এখনও তা পূর্ণতা পায়নি। তৈরী হয়েছে একটি মিউজিয়ামও। কিন্তু সবকিছুই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়ছে, নষ্ট হচ্ছে। যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের সম্পর্কিত নাতি নবীন চট্টোপাধ্যায় এবং নাতবৌ সুরভি চট্টোপাধ্যায়রাও জানিয়েছেন, চান্না আশ্রম ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষ্মী। তাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার উদ্যোগ নিক।

About admin

Check Also

ফিল্মি কায়দায় বর্ধমান আদালত চত্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ যুবককে পাকড়াও করল পুলিশ

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় বর্ধমান আদালত চত্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *