বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বৃহস্পতিবার রীতিমত পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পাশে বসিয়ে রাজনেতিক কারণে খুন হওয়া এক সক্রিয় তৃণমূল নেতার স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের নামে আড়াই লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এই টাকা দেওয়া হল পূর্ব বর্ধমান জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ এদিন গলসী থানার সাটিনন্দী গ্রামে খুন হওয়া জয়দেব রায়ের স্ত্রী চম্পা রায়ের হাতে আড়াই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। উল্লেখ্য, গত ১০ জুন রাত্রে বাড়ি ফেরার পথে নৃশ্ংস্যভাবে খুন হন জয়দেব রায় (৫০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওই দিন রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপির কর্মীদের হাতে ওই তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় পরের দিনই বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশ মর্গে ছুটে যান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ সহ তৃণমূলের নেতারা। হাসপাতালের পুলিশ মর্গে দলীয় এই নেতাকে যথাযোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর পর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সাটিনন্দী গ্রামে। সঙ্গে যান ওই দুই মন্ত্রী সহ তৃণমূলের নেতারাও। সাটিনন্দী গ্রামে দাঁড়িয়েই স্বপনবাবু সেদিন জানিয়ে দেন, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি গোটা রাজ্যে হিংসার খেলায় মেতেছে। কিন্তু তাঁরা গণতান্ত্রিকভাবেই এর মোকাবিলা করবেন। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এর প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। আর বৃহস্পতিবার নিহত জয়দেব রায়ের স্ত্রী চম্পা রায়ের হাতে আড়াই লক্ষ টাকা তুলে দেবার পর রাজনৈতিক কারণে খুন হওয়া জয়দেব রায়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে কিভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্বপন দেবনাথ। মেজাজ হারিয়ে তিনি বলেন, এই প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেবেন না। রীতিমত বিরক্ত স্বপনবাবু উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন, দুস্থদের টাকা দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ। আর এদিন স্বপনবাবুকে বাঁচাতে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, জয়দেব রায় রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে কেন তাঁরা সেদিন পুলিশ মর্গে গিয়ে তৃণমূলের পতাকা মৃতদেহে চাপিয়ে জয়দেব রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ? কেন স্বপনবাবু সেদিন বলেছিলেন বিজেপি জয়দেব রায়কে খুন করেছে ? – এর কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, এই সময়ই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই চম্পা রায়কে নিয়ে জেলাশাসকের ভিডিও কনফারেন্স রুম থেকে বেড়িয়ে চলে যান তৃণমূলের নেতারা। অপরদিকে, গত ১০ ফেব্রুয়ারী সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজে নিযুক্ত থাকা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা সামসুদ্দিন আলি সেখ (৪৩) খুন হন আততায়ীদের হাতে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অসহায় তাঁর স্ত্রী আঙ্গুরা বিবি। স্বপন দেবনাথ এদিন আঙ্গুরা বিবির হাতেও আড়াই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। স্বপনবাবু জানিয়েছেন, এই দুটি পরিবারের পক্ষ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। এদিন দুটি পরিবারের হাতেই আড়াই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, এভাবে রাজনৈতিক কারণে খুন হওয়া ঘটনায় সরকারীভাবে টাকা দেবার খবরে বিজেপির বর্ধমান জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। তাঁরা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী খুন হলেই যেন এই টাকা পান। কেবলমাত্র রাজ্যের সরকারে থাকার সুবাদে তাঁদের দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলে খুন হওয়া জয়দেব রায়ের স্ত্রীর হাতে এই আর্থিক সাহায্য দেওয়া হলে তা অন্যায় হবে। যদিও এদিন সন্দীপ নন্দী সাফ জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই খুন হয়েছিলেন জয়দেব রায়। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিজেপির ওপর অভিযোগ আরোপ করে বিজেপি কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার জয়দেব রায়ের স্ত্রীর হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হল বিজেপির দাবীই সঠিক। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে চাপা দিতেই এই আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কাটমানির আতংকে আতংকিত স্বপন দেবনাথ এদিন জয়দেব রায়ের স্ত্রী চম্পা রায়ের হাতে চেক তুলে দিয়ে জানান, তিনি নিজেই যেন চেক ব্যাঙ্কে জমা দেন। চেক যেন অন্য কারো হাতে না দেন।
Tags tmc
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …