বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকার শংসাপত্র কীভাবে ব্যাংকে পৌঁছল তা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুললেন জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত। পাশাপাশি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদাধিকারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবী যে প্রশ্ন তুলেছেন তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মত প্রকাশ করেছেন জেলা জজ। এর আগে ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিতে মত প্রকাশ করেছিলেন জেলা জজ। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদাধিকারীদের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবীর সওয়ালে জেলা জজ সিলমোহর দেওয়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। জামিন পেতে জেলা জজের কাছে আবেদন জানায় ঘটনায় ধৃত সুব্রত দাস। সোমবার সেই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানিতে ধৃতের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদাধিকারীদের ভূমিকা মোটেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। উচ্চ পদাধিকারীদের যোগসাজশ ছাড়া স্থায়ী আমানত প্রকল্পের টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ভাঙিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে জমা করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে পদাধিকারীরা জড়িত। তাঁদের আড়াল করতে কয়েকজনকে ফাঁসানো হচ্ছে। জেলা জজ ধৃতের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে, জেলা জজের পর্যবেক্ষণ কীভাবে স্থায়ী আমানত প্রকল্পের আসল শংসাপত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকে পৌঁছল তা সত্যিই রহস্যের। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদাধিকারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে ধৃতের আইনজীবী যে প্রশ্ন তুলেছেন তা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এর আগে ঘটনায় অপর এক অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিতেও জেলা জজ প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন। তাঁর পর্যবেক্ষণেও তা তুলে ধরেন জেলা জজ। এই পর্যবেক্ষণের পর বিষয়টি অন্য মাত্রা পায়। ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। যদিও তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর সিআইডির উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। স্বাভাবিকভাবেই সিআইডির তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ঘটনার তদন্তভার কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশ। কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে যাতে তদন্ত না যায় সে কারণে তড়িঘড়ি সিআইডিকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের বিসি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তোলার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। ব্যাংক থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা তোলার এ ধরনের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে দেয়। এরপরই ব্যাংকের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনাটি সামনে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে সেখানে তাদের কত টাকা জমা আছে এবং সাম্প্রতিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চায়। বর্ধমান শহরের স্টেশন রোড এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে জানানো হয়, স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সুজিত কুমার চৌধুরি এনিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে আরও একটি মামলা রুজু হয়। তদন্তে নেমে পুলিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শেখ এনামুল হককে গ্রেপ্তার করে। দু’টি মামলাতেই তিনি জামিনে ছাড়া পান। পরে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে সিআইডি হাতিয়ে নেওয়া টাকা সুব্রত বেশ কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে সরিয়েছে বলে জানতে পেরেছে। সেইসব অ্যাকাউন্টের হদিশও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও আদালতে জমা করেছে সিআইডি।
Tags Burdwan University The University of Burdwan University of Burdwan
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …