জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) :- যে বিধানসভা, ব্লকে আপনারা বিজেপিকে উৎখাত করার ডাকে সাড়া দেবেন, বছর শেষ হওয়ার আগে সেই ব্লকে-গ্রামে রাজ্য সরকার প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে দেবে। বিজেপির সরকার দিক আর না দিক। ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিতে পারলে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচা করে ৫০ লক্ষ প্রাপককে তাঁদের ছাদের টাকাও দিতে পারব। এটাই আমাদের গ্যারান্টি। শনিবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সেলিমাবাদ সি বি মাঠে বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী শর্মিলা সরকারের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে এসে একথা বলে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঠফাটা দুপুরে আড়াইটে নাগাদ এই সভার কথা থাকলেও এদিন অভিষেক আসেন বিকাল ৪ টে নাগাদ। অভিষেক এদিন বলেন, এই পূর্ব বর্ধমান জেলা বাংলার শস্যভাণ্ডার। আলু চাষের কেন্দ্রস্থল জামালপুর আর মেমারি। আজকে আলুচাষিরা বলুন, চাষ করতে গিয়ে বীজ কিনতে কী অবস্থা হয়? পাঞ্জাব থেকে বীজ আসে। ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে বীজ কিনতে হয়। তার উপর সারের দাম আরও বেড়েছে। ইউরিয়া, পটাশের দাম বেড়েছে। আচ্ছে দিন আসবে বলেছিল দশ বছর আগে। আর সাত দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১০ বছরে ট্রেলার দেখিয়েছি, এ বার ক্ষমতায় এলে সিনেমা দেখব। আমি মায়েদের, ভাইদের জিজ্ঞাসা করছি, ১০ বছরের ট্রেলারে কী দেখলেন? ১৭ টাকার কেরোসিন দেড়শো টাকা, ৭০ টাকার রসুন ৪৩০ টাকা, ৫৫ টাকার সর্ষের তেল ২০০ টাকা, ২০ টাকার দুধ ৫০-৬০ টাকা লিটার, গ্যাসের দাম চারশো টাকা থেকে হাজার টাকা, ৪০ টাকার ডিজেল ৯০ টাকা, ডিমের দাম সাড়ে তিন টাকা থেকে সাত টাকা। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজার টাকা ব্যাংকে দিচ্ছেন। আর মোদী সরকার আধার আর প্যান কার্ডের লিঙ্ক করে সেই হাজার টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বঞ্চনা, শোষণের যোগ্য শিক্ষা দিতে হবে ১৩ মে। অভিষেক বলেন, ১৩ মে দিনটা ঐতিহাসিক। সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রথমবার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৩ মে। আবার আপনাদের ভোটের দিন ১৩ মে। সবাইকে প্রণাম করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনে পূর্ব বর্ধমান অগ্রণী। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় ১৬-০ ফল ছিল। আবার প্রত্যেক বিধানসভা থেকে তৃণমূলকে জেতাতে হবে। এদিন জনতার সামনে তপশীলি সংক্রান্ত একটা কাগজ তুলে ধরে অভিষেক বলেন, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যসভায় এক সাংসদ প্রশ্ন করেছিলেন, তার জবাব হাতে নিয়ে আমি আপনাদের দেখাচ্ছি। কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রক, মন্ত্রী রামদগাস আটোয়ালে, সরকারে কে আছে—বিজেপি। রাজ্যসভায় ওই সাংসদ ২০২৩ সালে প্রশ্ন করেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তফশিলি জাতি, উপজাতিদের উপরে মোট অপরাধের ঘটনা কত? জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ৪৩ হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২০-২১ সালে তার সংখ্যা ৫১ হাজার। পাঁচ বছরে অপরাধের হার বেডে়ছে ২০ শতাংশ প্রতি বছরে। শীর্ষে রয়েছে বিজেপির ডবল ইঞ্জিল সরকার উত্তরপ্রদেশ। তেরো হাজার ঘটনা সেখানে, আর আমাদের ১০৮টা ঘটনা। আগামী দিনে চেষ্টা করব সেটা যেন শূন্য হয়। দ্বিতীয় স্থানে রাজস্থান, তারপরে মধ্যপ্রদেশ। সব জায়গায় কেন্দ্রেও বিজেপি, রাজ্যেও বিজেপি। এদিন অভিষেক বলেন, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার ভোট চাইতে এলে জিজ্ঞাসা করবেন রাণাঘাট, হরিণঘাটার তপশীলিদের জন্য কী করেছে আপনাদের সরকার? কোচবিহারে সভা করে বিজেপির এক নেত্রী বলেছেন, বিজেপি জিতলে তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাবে। বিজেপির রাজ্য বা সর্বভারতীয় স্তরের কোনও নেতা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, শোকজ করেনি। তাহলে ধরে নেওয়া যাবে কেন্দ্র, রাজ্যের অনুমতি নিয়েই বন্ধ হয়ে যাবে। জেতার পরে আবাসের টাকা এ ভাবেই বন্ধ করেছিল। এরপরই জনতার উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, আপনারা চান লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হোক? তাহলে ১৩ মে জবাব দিতে হবে। যত দিন আমাদের সরকার আছে, আমরা বেঁচে আছি আপনাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেউ বন্ধ করতে পারবে না। গ্যারান্টি দিচ্ছি, বিজেপি আটকাতে পারবে না।
মোদীর গ্যারান্টি প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ১৫ লক্ষ টাকা করে অ্যাকাউন্টে সব লবডঙ্কা। এই হচ্ছে বিজেপির গ্যারান্টি। দেখে সিদ্ধান্ত নিন। কয়েক দিন আগে মোদী বলেছেন, ‘যাঁরা যাঁরা মাছ খান, তাঁরা দেশবিরোধী, হিন্দু বিরোধী’। কারা মাছ খান, হাত তুলুন। অভিষেক বলেন, সংবাদমাধ্যমকে বলছি মাছ খাওয়ার হাত তোলার সংখ্যার ছবিটা প্রকাশ করুন। কী খাব, কী পরব, কীভাবে চলব, কাকে ভালোবাসব ঠিক করবে বিজেপি আর প্রধানমন্ত্রী! এই অধিকার আপনারা বিজেপিকে দিতে চান? বিজেপির ইশতেহারে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্ম সংস্থান নিয়ে একটাও কথা নেই। বলা আছে, এক দেশ এক ভোট করব। জানেন এটা কি? পাঁচ বার ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেবে। পাঁচ বছরে এক বার ভোট দেবেন। সংবিধান বদল করতে চায় এরা। হুংকার দিয়ে অভিষেক বলেন, দু’দফায় ভোট হয়েছে। বাংলার উপরের জেলায় বাড়িতে ঢুকে সার্জিকাল স্ট্রাইক করেছি। মাথা ভেঙেছি, তারপরে ঘাড় ভেঙেছি। এ বার কোমর ভাঙব। ১৩ তারিখ পা আপনারা ভাঙবেন। হাঁটু ভাঙবেন। সপ্তম দফা আমার ভোট, ডায়মন্ডহারবার। যেটুকু রয়েছে গণতান্ত্রিক ভাবে চূর্ণ করে ৪ তারিখ ভোটবাক্স খুললে দেখা যাবে, বল হরি হরি বোল, বহিরাগতদের খাটে তোল। বীরভূমে ১৫ দিনে দু’বার প্রার্থী পাল্টেছে। কী অবস্থা ভাবুন। আমি ভেবেচিন্তে কথা বলি। কথা দিলে কথা রাখি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেনি ৪৮ দিন হয়ে গেল। যেভাবে এদের সাহায্য ছাড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়েছি, একশ দিনের টাকা দিয়েছি, ৫৯ লক্ষ প্রাপককে একশ দিনের টাকা দিয়েছে। দয়াদাক্ষিণ্যের প্রয়োজন নেই। আপনারা ২ লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জেতানোর শপথ নিন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় একশ দিনের প্রকৃত প্রাপকদের ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৬৬ জনকে ফেব্রুয়ারি মাসে বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৫২ জন মহিলাকে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছি। খাদ্যসাথী প্রকল্পে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছি ৪৮ হাজার জনকে।
সিপিএমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০১১ সালের আগে সিপিএম কী ভাবে এই জেলাকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। সিপিএমের রাজনৈতিক দর্শন ছিল, ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’। বিজেপির দর্শন, ‘গরিব করে রেখে দে মা ভোটটা যেন পাই’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই গরিবের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা ইশতেহারে বলেছি, কেন্দ্রে গঠনমূলক, সংবেদনশীল, প্রগতিশীল ‘ইন্ডিয়া’ সরকার হবে। সেখানে বাংলা চালিকাশক্তির ভূমিকায় থাকবে। এটা হলে বছরে ১০টা করে সিলিন্ডার বিনামূল্যে দেব। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সারা ভারত জুড়ে বাস্তবায়িত হবে। কৃষকবন্ধুর টাকা মোদী সরকার আটকে দিয়েছি। আয়ুষ্মান ভারত বাংলায় করতে দিলে ১০ কোটি লোকের মধ্যে ৮০ লক্ষ লোক সুবিধা পেত। স্বাস্থ্যসাথী ১০ কোটি মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। টিভি, মোবাইল থাকলে আয়ুষ্মান ভারতে সুযোগ পাবেন না। আমাদের সরকারের স্বাস্থ্যসাথী সব ক্ষেত্রেই পাবেন। আপামর জনসাধারণ সবাই পাবেন। জনতার কাছে অভিষেক জানতে চান, দিদির গ্যারান্টি না মোদীর গ্যারান্টি? ১৩ তারিখ যোগ্য জবাব দেবেন? উচিত শিক্ষা দিতে হবে তো? বহিরাগতদের বিসর্জন দেবেন তো? তিনি বলেন, পূর্ব বর্ধমানের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে গেলাম। সাবধানে ফিরবেন। গরমে চেয়েছিলাম তাড়াতাড়ি ভোট হোক। এরা মানুষকে অত্যাচার করতে চায়। বাংলার মানুষের সঙ্গে বৈমাতৃসুলভ ব্যবহার করে। আপনাদের একটা ভোটের অনেক দাম। নিজের অধিকার সামনে রেখে ভোট দিন। কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে। এখানে বোতাম টিপলে দিল্লিতে ভূমিকম্প হবে। একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় পায় এরা। আমার মা-বাবা, স্ত্রী কাউকে ছাড়েনি। যে বিচারপতি সংস্থা লাগিয়েছিলেন, তিনি আজ বিজেপির প্রার্থী। আপনারা পাশে থাকুন। লড়াই করে যাব। বশ্যতা স্বীকার করব না।
Tags Abhishek Banerjee AITC All India Trinamool Congress Ashim Kumar Sarkar Ashim Sarkar Bardhaman Durgapur PC Bardhaman Purba Lok Sabha Constituency Bardhaman Purba Parliamentary Constituency Bardhaman-Durgapur Bardhaman-Durgapur constituency Bardhaman-Durgapur Lok Sabha constituency Bardhaman-Durgapur Parliamentary Constituency Bharatiya Janata Party Bishnupur Lok Sabha Constituency Bishnupur Parliamentary Constituency Bishnupur PC BJP Bolpur Lok Sabha Constituency Bolpur Parliamentary Constituency Bolpur PC Burdwan Durgapur PC Burdwan Purba Lok Sabha Constituency Burdwan Purba Parliamentary Constituency Burdwan Purba PC Burdwan-Durgapur Burdwan-Durgapur Constituency Burdwan-Durgapur Parliamentary Constituency Burdwan–Durgapur Lok Sabha Constituency Dilip Ghosh Dr. Sharmila Sarkar General Election Kirti Azad Kirti Bhagwat Kirti Bhagwat Jha Azad Kirti Jha Kirti Jha Azad Kirtivardhan Bhagwat Jha Azad Lok Sabha Election Saumitra Khan Sharmila Sarkar Sujata Khan Sujata Mondal Sujata Mondal Khan tmc Trinamool Congress
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …