Breaking News

ইভিএম বিকল, সংঘর্ষ, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ সত্ত্বেও নির্বিঘ্নে ভোট পূর্ব বর্ধমান জেলায়!

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সুচতুরভাবে ভোট প্রক্রিয়াকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে এসে এদিন যেভাবে ভোট পরিচালনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস তা কার্যত দুঁদে সিপিএমের নেতারাও কল্পনা করতে পারেননি। ভোটের আগে যে সিপিএমের নেতারা রীতিমত মুখের চওড়া হাসি হেসে ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হবে এবং তাঁরা ফের জয়ী হতে চলেছেন – ভোট মিটতেই তাঁদের সেই হাসি কিছুটা হলেও মিলিয়ে গেল। সিপিআই (এম)-এর বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক জানিয়েছে্নতৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালের পর থেকে যে কায়দায় ভোট শুরু করেছে সেই একই কায়দায় এবারেও লোকসভা নির্বাচন করিয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষেরজেদ অনেক জায়গায় তাদের প্রতিহত করেছেরুখে দিয়েছে অপচেষ্টাকে। কিন্তু সার্বিকভাবে শাসকদলকে রোখা যায়নি। যেখানে রোখা যায়নিসেখানেই শাসকদল ছাপ্পা দিয়েছে। অভিযোগ প্রচুর জমা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা কোথাও খুব ভাল ছিল আবার কোথাও খুব খারাপ ছিল। কিভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনে ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত ছবি তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছেন। বস্তুতসোমবার সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি জায়গায় তৃণমূল – বিজেপি সংঘর্ষ ঘটলেও সার্বিকভাবে ভোট প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেই দাবী করেছেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার ভোর থেকেই বুথে বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভোটাররা। তীব্র গরমের মাঝেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন বুথে কমবেশী ভোটারদের লাইন দেখা গেলেও দুপুরের দিকে বহু বুথেই দেখা মেলেনি ভোটারদের। পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের পাশাপাশি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আউশগ্রাম,মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রামেও বহু বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ থাকায় সকাল থেকে ভোটগ্রহণের কাজ শুরু হতে অনেক দেরী হয়ে যায়।  এরই মাঝে গলসী ষ্টেশন এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে বেধড়ক মারধোর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগতৃণমূল সমর্থকরা ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল তার প্রতিবাদ করাতেই মারধর করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির দিকে একই অভিযোগ করেছে তৃণমূল। এই ঘটনা্য় উত্তেজনা ছড়ায় গলসী এলাকায়। আউশগ্রামের বোলপুর লোকসভার ভেদিয়ায় তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় সঞ্জু মাঝি নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে বলে অভিযোগ। ভেদিয়ার সাঁতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭নম্বর বুথের এই ঘটনার পাশাপাশি আউশগ্রামের উক্তা গ্রামে ৬৬ নম্বর বুথে মেটে পাড়াতে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে ৩০০ জন গ্রামবাসী ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। বিজেপির অভিযোগবেশ কয়েকজন কর্মীকে মারধোর করেছে তৃণমূল। বুথের বিজেপি এজেন্ট তাপস হালদারকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের মেমারিতে ২৩২ নং বুথের তৃণমূল পার্টি অফিসে ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। দলীয় পতাকা নিয়ে ওই অফিসে ঢুকে বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুর চালায় ও কর্মীদের মারধর করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি নেতৃত্বের দাবী তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। এরই পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়েই বিভিন্ন বুথে বুথে বেপরোয়া ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। জামালপুরের শালমূলায় রাস্তার দাবীতে ভোট বয়কট করেন গ্রামবাসীরা। ৭৪০ জন ভোটারদের মধ্যে একজনও এদিন ভোট দেননি। যদিও এব‌্যাপারে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেনগোটা জেলা জুড়েই এদিন শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছিলদ্রুত তা মেটানো হয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে ভোট পড়েছে ৮৩.৫৫ শতাংশ এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে ভোট পড়েছে ৮৪.৭৮ শতাংশ। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখোপাধ্যায় এবং বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদার উভয়েই জানিয়েছেনবহু জায়গায় কংগ্রেসের এজেণ্টদের মারধর করে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান পূর্বের কংগ্রেস প্রার্থীর নির্বাচনী এজেণ্ট কাশীনাথ গাঙ্গুলী জানিয়েছেননির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা অনেকটাই ভাল ছিল। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস পূর্বস্থলী উত্তরের খড়দহপিলা প্রভৃতি এলাকায় কংগ্রেস এজেণ্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। বাঘনাপাড়ার আলিগড়জামালপুরের আঝাপুররায়নাহিজলনা প্রভৃতি এলাকায় শাসকদল দেদার ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। সমস্ত বিষয়েই তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।  বর্ধমান শহরের গোদায় শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। লার্কুডিতে বিজেপির নির্বাচনী এজেণ্টকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও তাঁর বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা চড়াও হন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেনগোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় ৩৫০রও বেশি বুথ থেকে বিজেপির এজেণ্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বিজেপি সমর্থক থেকে সাধারণ ভোটারদের ওপর। তাঁদের বেশ কয়েকটি জায়গায় কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়া জানিয়েছে্নযে সমস্ত বুথে রাজ্য পুলিশ ছিল সেখানেই তৃণমূল তাণ্ডব চালিয়েছে। বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাস অভিযোগ করেছেন, কালনা শহরে ভোট গ্রহন কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় তিনি হেনস্থার শিকার হন। তাঁর সেক্রেটারি, গাড়ির চালক ও নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। কালনার নন্দগ্রামে তৃণমূল সমর্থকদের ওপর বিজেপির আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। এরই পাশাপাশি খোদ স্বপন দেবনাথের নিজস্ব বুথ এলাকাতেই তৃণমূল সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেনবেশ কিছু জায়গায় বিজেপি সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ তা প্রতিহত করে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছে। মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *