বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কর্ণাটকের মহীশূর, উড়িষা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের পর এবার পশ্চিমবাংলারও নাম উঠতে চলেছে শ্বেত চন্দন চাষের তালিকায়। আগে থেকেই এদেশের কয়েকটি রাজ্য ছাড়াও ভারত লাগোয়া শ্রীলঙ্কা কিংবা নেপালের নাম ছিল বহু মূল্যবান এই শ্বেত চন্দন চাষের তালিকায়। আর এরপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা শ্বেত চন্দন চাষের প্রোজেক্ট ডাইরেক্টর ড. জগতপতি তা-এর হাত ধরে এবার বাংলাও শ্বেত চন্দন চাষের তালিকায় নাম তুলতে চলেছে গোটা ভারতবর্ষের মানচিত্রে। ২০১৭ সাল থেকেই এব্যাপারে ব্যাপক গবেষণা এবং শ্বেত চন্দনের চারা তৈরীর প্রকল্প হাতে নিয়েছেন জগতবাবু। শ্বেত চন্দন গাছের অঙ্কুরোদগম এবং অভিযোজন বিষয়ে কাজ করাই এই প্রকল্পের প্রধান উদেশ্য । তিনি জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার হয়। সেখান থেকেই তিনি জানতে পারেন বাংলায় শ্বেত চন্দন (সাদা চন্দন) গাছের চাষ তেমন হয়না। আর তাই বৃক্ষ মানচিত্রে নাম নেই এই মহা মূল্যবান গাছ চাষের এলাকা হিসাবে বাংলার। তিনি জানিয়েছেন, এরপরই তিনি রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রোজেক্ট জমা দেন। তা অনুমোদন হলে বর্ধমান রাজ কলেজের তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা নিরুপমা গোস্বামী ভট্টাচার্যের সহযোগিতায় বর্ধমান রাজ কলেজের ভেষজ বাগানে তিনি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার এই প্রোজেক্টর কাজ শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন একজন পিএইচডি স্কলারও। জগতবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই প্রোজেক্টে ভাল সাড়া মেলায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অর্থানুকূল্যে আগামী মার্চ মাস থেকে ৪টি কেন্দ্রকে নিয়ে অন্য একটি প্রোজেক্ট শুরু করতে চলেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই প্রকল্প এলাকার মধ্যে থাকছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বর্ধমান, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাঁকুড়া জেলাও। প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার এই প্রকল্প। জগতবাবু জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, কম জলসেচ, কম পরিচর্যায় বাঁচতে পারে এই গাছ। তাই খরাপ্রবণ এলাকাতেও এই শ্বেত চন্দনের চাষ হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু শ্বেত চন্দনের ওষধি গুণ অসাধারণ তাই এই কাঠের দামও বেশি। বর্তমানে এই কাঠ প্রায় ১৫ হাজার টাকা কেজি। তিনি জানিয়েছেন, আজ বিনামূল্যে কোনো গাছ লাগালে প্রায় ২০ বছর পর তার দাম হতে পারে ১ কোটি টাকা। তিনি জানিয়েছেন, এই শ্বেতচন্দন গাছ চাষ করা যেমন সহজসাধ্য, তেমনি অত্যন্ত লাভজনকও। এই গাছ চাষে তেমনভাবে কোনো খরচও নেই। সেচও লাগে কম। প্রথম ২ বছর গাছের সামান্য যত্ন নিতে পারলেই আর কোনো অসুবিধা নেই। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের পর যেখা্নে গোটা রাজ্যে মাত্র ৩ হাজার চন্দন গাছ ছিল। ২০১৭ সাল থেকে সরকারের অর্থানূকূল্যে গৃহিত বর্ধমান রাজকলেজের এই প্রোজেক্ট চালু করার পর বর্তমানে এই গাছের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি বীজ থেকে চারা উত্পাদন করার হারও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ। যেখানে স্বাভাবিক নিয়মে গাছের বীজ পরে তা থেকে ১২-১৪ শতাংশ চারা তৈরী হয়। বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে এই অঙ্কুরোদগমের হার বাড়ান হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বর্ধমান রাজ কলেজের প্রকল্প এলাকা থেকেই তিনি ১০ হাজারেরও বেশি চারাগাছ অন্য রাজ্যে পাঠিয়েছেন। এই প্রকল্প এলাকা থেকেই বিনামূল্যে চারা দিচ্ছেন তাঁরা। এমনকি যিনি চারা নিচ্ছেন ৩ মাস অন্তর তাদের কাছে গাছের বিষয়ে খোঁজও নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম ২ বছর শ্বেত চন্দন গাছের কাছাকাছি মাটিতে অড়হর, তুলসী, নয়নতারা, আঁকন্দ প্রভৃতি যেকোনো একটি আশ্রয়দাতা গাছ লাগানো জরুরী। তিনি জানিয়েছেন, গাছের বয়স ২০ হলেই প্রায় পরিণত এই গাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি শক্ত কাঠ দেবে। এই কাঠের দাম বর্তমান বাজারে যা ১৫ হাজার টাকা প্রতি কেজি তা ২০ বছর পর আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা। এছাড়াও পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি নরম কাঠ। এমনকি মাটির ভেতর শিকড় ইত্যাদি কাঠও পাওয়া যেতে পারে নয়নয় করেও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার। সব মিলিয়ে এখনই কোনো গাছ বসালে আর তা যদি বেঁচে বাড়তে থাকে তাহলে প্রায়ে ২০ বছর পর অনায়াসেই আপনি হয়ে যেতে পারেন কোটি টাকারও মালিক।
Tags adaptation Burdwan Raj College Burdwan University germination Indian Sandalwood Sandal Sandal Wood Sandalwood Santalum Album White sandalwood অঙ্কুরোদগম অভিযোজন চন্দন শ্বেত চন্দন
Check Also
বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন …