গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ঘটনার সময় ডাকাত দলের একজন ব্যাংকে ঢুকে ফোন করেছিল। সেই সূত্রই বর্ধমান শহরের বৈদ্যনাথ কাটরায় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনার কিনারায় সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। সে কারণে ঘটনার কিছু আগে ও পরে কার্জন গেট এলাকায় কারা কারা ফোন ব্যবহার করেছিল তা ডাম্পিং ব্যবস্থায় জানার চেষ্টা করছে পুলিস। ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে ডাকাত দলের সম্পর্কে ক্লু মিলতে পারে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মেলায় কিছুটা স্বস্তিতে পুলিস। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে, ডাকাতদের সকলেরই মুখ ঢাকা ছিল এবং মাথায় টুপি ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ডাকাতদের কেবলমাত্র চোখ দেখা যাচ্ছে। মুখ কোনওভাবেই চেনা যাচ্ছে না। তবে, কার্জনগেট এলাকার রাস্তার একটি ফুটেজ পেয়েছে পুলিস। তাতে দুই যুবককে বাইকে চেপে যেতে দেখা যাচ্ছে। সেই ফুটেজে দু’জনের মুখ দেখা যাচ্ছে। দুই বাইক আরোহীর কাছে দু’টি স্কুল ব্যাগ রয়েছে। সেই ফুটেজ ব্যাংক থেকে পাওয়া ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ডাকাত দলটি কোন দিক দিয়ে ব্যাংকে ঢুকেছিল তা পরিস্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে। সে কারণে কার্জন গেট ও বিসি রোডের পাশাপাশি অনিতা সিনেমা লেন ও বৈদ্যনাথ কাটরার ভিতরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অপারেশন সেরে ডাকাত দলটি কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পালায় বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছেন তদন্তকারীরা। সে কারণে আশপাশ এলাকা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ শিল্পীকে দিয়ে এক দুষ্কৃতির স্কেচ আঁকানো হয়েছে। যদিও দুষ্কৃতিদের মুখ ঢাকা থাকায় স্কেচের ছবি দেখে দুষ্কৃতি শনাক্তকরণ কতখানি সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিসের মধ্যেই। জেলার পুলিস সুপার কামনাশীষ সেন বলেন, এখনো পর্যন্ত ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারে নি। তদন্ত চলছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা ৪৫ নাগাদ চার সশস্ত্র ডাকাত ব্যাংকে ঢোকে। তার মিনিট খানেক আগে ব্যাংকের দুই কর্মী ও ঝাড়ুদার ব্যাংক খোলেন। তারপর ব্যাংকের ভিতর আরও দুই দুষ্কৃতি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে ব্যাংকের দুই কর্মী ও ঝাড়ুদারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাংকের বাকি কর্মীরা ঢুকলে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়। এরপর স্ট্রং রুম ও ক্যাশ সেফের চাবি কেড়ে নেয় তারা। ক্যাশিয়ারকে দিয়ে স্ট্রং রুম ও সেফের চাবি খোলায় দুষ্কৃতিরা। ব্যাংকে ৩২ লক্ষ ৮৯ হাজার ১০০ টাকা ছিল। ডাকাতরা সেই টাকা নিয়ে কয়েকটি স্কুল ব্যাগে ভরে নেয়। ডাকাতি চলাকালীনই কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে ঢোকেন। তাঁদেরও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে একটি জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়। সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক ভেবে ডাকাতরা রাউটার ও মডেম নিয়ে পালায়। এক কর্মীর ও গ্রাহকদের মোবাইল কেড়ে নেয় ডাকাতরা। দলের সবাই হিন্দিতে কথা বলছিল। প্রত্যেকেরই চেহারা বেশ ভালো ছিল। ব্যাংক কর্মীদের বয়ানের ভিত্তিতে এবং অপারেশনের ধরণে গ্যাংটি ভিন রাজ্যের বলেই অনুমান তদন্তকারীদের।