বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সোমবারও সকাল থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গত ৬ দিনের অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলেও এদিন রীতিমত আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা মানবিক মুখ দেখালেন। তাঁরা যে কার্যত কাজে ফিরতে চাইছেন এবং রোগীর চিকিত্সা করতে চাইছেন – এদিন তারই প্রমাণ মিলল। সোমবার সকাল থেকে যথারীতি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকলেও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমান্তরাল আউটডোর চালালেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ধর্ণা মঞ্চতেই এদিন একটি টেবিল, গোটা চারেক চেয়ার এবং দুটি ক্যাম্প খাট নিয়ে তাঁরা আউটডোরের চিকিত্সা করলেন। আর স্বাভাবিকভাবেই জুনিয়র ডাক্তারদের এদিনের এই ভূমিকায় রীতিমত খুশী রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজন। এদিন আন্দোলনরত চিকিত্সকদের সঙ্গে দেখা করেন আইএমএ–র একদল চিকিত্সকও। বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়াড় বেড়ের বাসিন্দা সাড়ে পাঁচ বছরের নুপূর কর্মকারকে নিয়ে নিরুপায় হয়েই বর্ধমান হাসপাতালে এসেছিলেন বাবা পার্থ কর্মকার। বেশ কিছুদিন ধরেই পেটে যন্ত্রণা এবং বমির উপসর্গ নিয়ে ভুগছে শিশুটি। বেসরকারীভাবে তার চিকিত্সা করিয়েও কোনো লাভ না হওয়ায় এদিন মেয়েকে নিয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। কিন্তু আউটডোর বন্ধ ছিল। তাই কার্যত ফিরেই যাচ্ছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের নজরে পড়ায় তারাই শিশুটিকে ক্যাম্প খাটে শুইয়ে তার প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। প্রেসক্রিপশনও লিখে দেন। ইউএসজির প্রয়োজন বলে লিখে দিলেও খোদ জুনিয়র ডাক্তাররাই তাকে নিয়ে জরুরী বিভাগে তার ইউএসজির রিক্যুজিশন স্লিপ তৈরী করে দেন। পার্থবাবু জানিয়েছেন, মেয়েকে নিয়ে তিনি এতদিন ধরে যেভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন এদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে জুনিয়র ডাক্তারদের ব্যবহার পেয়ে ততটাই খুশী হয়েছেন। হাসপাতাল পুরোদমে চালু হোক এটাই তাঁরা চাইছেন। আবার অন্যদিকে, আরামবাগ থেকে রেফার হয়ে আসা ক্যান্সারের রোগী বৈদ্যনাথ কিস্কু জরুরী বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের কাছে গিয়েও কিন্তু সুরাহা পেলেন না। যেহেতু কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ছিলেন না তাই বৈদ্যনাথ কিস্কুকে কার্যত তাঁরা ফিরিয়েই দেন। বৈদ্যনাথ কিস্কুর ছেলে সঞ্জয় কিস্কু জানিয়েছেন, বেশ কিছদিন ধরেই তাঁর বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আরামবাগে প্রায় ৩ সপ্তাহ ভর্তি ছিলেন। কিন্তু উপসম না হওয়ায় আরামবাগ থেকে তাকে রেফার করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যদিও এদিন বর্ধমান হাসপাতালের সিনিয়র চিকিত্সকরা তাঁকে জানিয়ে দেন, হাসপাতাল পুরোদমে চালু হলে নিয়মমেনেই তাঁর চিকিত্সা করানো হবে।
পাশাপাশি, এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের আলোচনার শেষে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও জুনিয়র ডাক্তাররা বিজয় উল্লাস করেন। মিষ্টিমুখও করা হয়।