Breaking News

বর্ধমানে সিজেএমের সঙ্গে বিরোধ আইনজীবীদের, জেলা জজের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান):- বর্ধমানের সিজেএমের সঙ্গে ফের বিরোধ বাধল আইনজীবীদের। শুক্রবার এর জেরে দীর্ঘক্ষণ সিজেএম আদালতে কাজকর্ম বন্ধ থাকে। বন্ধ হয়ে যায় জেলা ও দায়রা আদালতের কাজকর্ম। ফলে, সমস্যায় পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। সিজেএম আদালতকক্ষে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আইনজীবীরা। টেবিল চাপড়ে, হৈ-চৈ করে সিজেএমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। শেষমেশ জেলা জজের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সিজেএমকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় বিচারভার ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া হয়। ঘন্টা তিনেক বন্ধ থাকার পর বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ সিজেএম আদালতের কাজকর্ম ফের শুরু হয়। ঘন্টা দু’য়েক বন্ধ থাকার পর জেলা জজ আদালতের কাজকর্মও শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ উদ্বেগে থাকা বিচারপ্রার্থীরা হাফ ছেড়ে বাঁচেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, সিজেএমের কাজকর্ম নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। এর আগেও কয়েকবার আইনজীবীরা সিজেএমের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিজেএমের কাজকর্ম নিয়ে হাইকোর্টের জোনাল জজকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। তারপরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এদিন একটি মামলা চলাকালীন এক আইনজীবীর সঙ্গে সিজেএমের বিরোধ বাধে। তারপরই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়। তবে, জেলা জজের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিটেছে। সিজেএমকে সরিয়ে এদিনের মতো ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সিজেএম আদালতে একটি বধূ নির্যাতনের মামলার বিচার চলছিল। উভয়পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে গিয়েছে। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় অভিযোগকারিনী ঘটনার বিষয়ে তাঁর কিছু মনে নেই বলে জানান। সাক্ষীর বয়ান নথিভূক্ত করা নিয়ে সিজেএমের সঙ্গে অভিযুক্তের আইনজীবীর মতানৈক্য হয়। এনিয়ে সিজেএমের সঙ্গে অভিযুক্তের আইনজীবীর তর্ক-বিতের্কর সৃষ্টি হয়। সেই সময় অন্য আইনজীবীরাও তাতে যোগ দেন। সিজেএমকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করা হয়। অশালীন মন্তব্য ভেসে আসে সিজেএমের উদ্দেশ্যে। ক্রমে তা চরম আকার নেয়। পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে যাওয়ায় আসন থেকে নেমে পড়েন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা। এরপরই আইনজীবীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সিজেএমের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা জেলা জজের কাছে নালিশ জানান। সেই সময় জেলা জজের আদালতে শুনানি চলছিল। জেলা জজ অজেয়া মতিলাল আইনজীবীদের তাঁর চেম্বারে ডাকেন। সেখানে আইনজীবীরা ঘটনার কথা খুলে বলেন। বার সূত্রে খবর, জেলা জজ তাঁর চেম্বারে সিজেএমকে আসতে বলেন। কিন্তু, সিজেএম জেলা জজের চেম্বারে আসেন নি। দীর্ঘক্ষণ বারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলা জজের আলোচনা হয়। জেলা জজ আলোচনার জন্য তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক নন্দন দেব বর্মণকে সিজেএমের কাছে পাঠান। তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সিজেএমের চেম্বারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে বারের সহ-সভাপতি হরিদাস মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূল আইনজীবী সেলের নেতা অরূপ দাস যান। শেষ পর্যন্ত সিজেএমকে সরিয়ে সেই জায়গায় ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট সোমনাথ দাসকে বিচারপর্ব চালানোর জন্য বলা হয়। ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিকাল ৪টে ১৫ নাগাদ দায়িত্ব নেন। তারপর কাজকর্ম শুরু হয়। তার কিছুক্ষণ আগে জেলা জজের আদালতের কাজকর্ম শুরু হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাক্ষ্য দেওয়ার সময় সাক্ষীকে সিজেএম নানাভাবে ভয় দেখান। এমনকি তাঁকে জেলে পুরে দেওয়ারও হুমকি দেন সিজেএম। সাক্ষীকে জেরার সময় সিজেএমের কথায় তিনি বয়ান দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করি। সাক্ষী সিজেএমের কথায় সাক্ষী দিয়েছেন বলে ভরা আদালতকক্ষে জানান। সাক্ষীর সেই বয়ান নথিভূক্ত করার জন্য বলি। কিন্তু, সিজেএম কোনওভাবেই সাক্ষীর এই বয়ান নথিভূক্ত করতে চাননি। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। সিজেএমকে সাক্ষীর বয়ান নথিভূক্ত করার জন্য বারবার বলার পরও তিনি তা করেন নি। এতে মামলায় প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অন্যান্য আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *