গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মহিলা আইনজীবী খুনে এখনও অন্ধকারে পুলিস। আইনজীবীকে খুনের পর ৫ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু, কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। প্রশ্ন উঠছে পুলিসের ভূমিকা নিয়ে। তবে, লুটের উদ্দেশ্যে যে আইনজীবীকে খুন করা হয়নি ঘর থেকে গয়না উদ্ধার হওয়ার পর সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত পুলিস। তবে খুব পরিচিত কেউ খুনে জড়িত থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিসের। খুনের পিছনে সম্পত্তিগত বা সম্পর্কজনিত কারণ থাকতে পারে বলে পুলিসের অনুমান। মহিলা আইনজীবীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও খোঁজখবর চালাচ্ছে পুলিস। তাতে বেশকিছু তথ্য উঠে আসছে। মহিলা আইনজীবীর মক্কেলদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিস। তাঁর সম্পত্তির বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিস। সহকর্মী খুনে আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে পুলিসের। আইনজীবীদের কাছ থেকে খুনের বিষয়ে কিছু তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিস। তাতে ভোঁতা ভারি কিছু দিয়ে মহিলার মাথায় আঘাত করা হয় বলে জানানো হয়েছে। মাথায় আঘাতের কারণে ভিতরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে বলে ময়না তদন্তের রিপোের্ট উল্লেখ করা হয়েছে। শরীরের অন্য কোথাও তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিস। মৃত্যুর আগে আইনজীবীর সঙ্গে খুনির ধস্তাধস্তি হয়নি বলেই পুলিসের অনুমান। খুব চেনা কেউ আচমকা ভারি কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করায় মহিলা আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে, আইনজীবীর হাত-পা বাঁধার কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুলিসের মধ্যে। খুনের আগে হাত-পা বাঁধা হয়েছিল নাকি দেহ পাচারের জন্য তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে পুলিসের মধ্যে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনজীবীর বাড়ি থেকে একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিস। তাতে দু’জনের নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ চিরকুটটি ফেলতে পারে বলে পুলিসের অনুমান। চিরকুট মেলার বিষয়টিকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিস। তবে, সেটি তদন্তে সাহায্য করতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিস।
বর্ধমান আদালতের মহিলা আইনজীবী খুনে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। দু’টি জায়গা থেকে রিপোর্ট মেলার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিস। সেখান থেকে খুনের কিনারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করে চলে যাওয়ার পর মিতালি দেবীর ঘর থেকে সোনার গয়না উদ্ধার হয়। ঘরে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হয়। ঘর থেকে চুরির বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য দিতে পারেনি মৃতার পরিবারের লোকজন। তা থেকে পুলিসের অনুমান, লুটের জন্য মহিলা আইনজীবীকে খুন করা হয়নি। যদিও খুনের পিছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে বলে আইনজীবীর পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন। আশপাশের লোকজন অবশ্য বাড়িতে কে কে বেশি আসত তা জানিয়েছেন পুলিসকে।
আইনজীবী খুনের প্রতিবাদে এদিন রাজ্যজুড়ে পেন ডাউন কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা। ফলে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। বেলা আড়াইটা নাগাদ রাজ্য বার কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধি দল বর্ধমান আদালতে আসে। সেখানে বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। খুনি ধরা না পড়ায় তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। সেখান থেকে মিছিল করে এসপি অফিসে পৌঁছান আইনজীবীরা। বার কাউন্সিল ও বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধি দল এসপির সঙ্গে দেখা করে। বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে যথাযথ তদন্তের দাবি করা হয়। আলোচনা শেষে পুলিসের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, বার কাউন্সিলের সদস্য প্রসূন কুমার দত্ত, বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উদয় মুখোপাধ্যায় ও সম্পাদক সদন তা বলেন, পুলিস ঠিকঠাক তদন্ত করছে। সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। আমরাও প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। ঘটনার কিনারায় আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে পুলিস সুপার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা পুলিসের এক কর্তা বলেন, সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। খুনের পিছনে সম্পত্তিগত কারণ থাকতে পারে। আবার সম্পর্কজনিত কারণও থাকতে পারে মহিলা আইনজীবী খুনে। কিছু তথ্য মিলেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Tags Bar Council Lawyer lawyer murder
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …