বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অনলাইন পদ্ধতিতে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির যে সমস্ত টাকা রাজ্য সরাসরি জমা পড়ছে তা ফের পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কাছেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। রবিবার একথা জানিয়ে গেলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। রবিবার বর্ধমানের আলমগঞ্জের কল্পতরু মাঠে আয়োজিত রাইস প্রো-টেক এক্সপো ২০২২-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন প্রদীপ মজুমদার-সহ রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, বিডিএ-এর চেয়ারম্যান কাকলী তা গুপ্ত, বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস-সহ বর্ধমান জেলা রাইস মিলস এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারাও। উল্লেখ্য, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, কিন্তু তার আগেই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতির ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রায় সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেই সরাসরি জানানো হচ্ছে – পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির ‘ওন ফাণ্ড’-এর অবস্থা অত্যন্ত করুণ, ফলে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে এই ফাণ্ড থেকে যে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয় তা করা যাচ্ছে না। রীতিমত সংকটের মুখে পড়েছে কার্যত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এর মূল কারণ হিসাবে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন সিংহভাগ কাজের ক্ষেত্রেই অন লাইন পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির ঘরে যে টাকা আসত তা সরাসরি চলে যাচ্ছে রাজ্যে। আর এর ফলেই আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন তাঁরা। শুধু তাইই নয়, বেশ কিছু পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে টুকু নিজস্ব তহবিলে টাকা ছিল দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করতে সেই টাকাও নিঃশেষিত। আর এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির এই উদ্বেগের নিরসন করতেই পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছে যে টাকা আসছে সেগুলি ফের তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে কেন এখনও তা ওনারা পাননি তা জরুরী ভিত্তিতে তিনি খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি চলতি বিধানসভা অধিবেশনেও এই বিষয়কে তিনি তুলে ধরবেন বলে এদিন জানিয়ে যান। অপরদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, বিগত নির্বাচনগুলিতে তিনি দেখেছেন নিজেদের সক্রিয় সমর্থক (নাম না করে বিজেপির দিকেই ইঙ্গিত)দের কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তাদের দিয়ে ডিউটি করানো হয়েছিল। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, বিগত নির্বাচনগুলিতে তাঁর গাড়িকে ৩০০ মিটার দূরে আটকে রেখে দিয়ে বিজেপির নেতাদের গাড়িকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে এভাবেই। এটা তিনি দেখেছেন। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর কোনো ভরসাই নেই। অপরদিকে, এদিন রাইস প্রো টেক এক্সপোর এই সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস থেকে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, প্রদীপ মজুমদার প্রমুখরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাকে নানাভাবে বঞ্চনা করার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বক্তারা। এরই পাশাপাশি এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা রাইস মিলস এ্যাসোসিয়েশনের কার্য্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, রাইস মিলগুলির যে করুণ অবস্থা এবং তাঁদের যে সমস্যা তা শোনবার মত কেউই নেই। এই রাইস প্রো টেক এক্সপোতে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি কোনো উত্তরই দেননি বলে এদিন দুঃখ প্রকাশ করেন। এব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, দিল্লীর ওপর লাগাতার চাপ সৃষ্টির কাজ করে যেতেই হবে। তিনি বলেন, রাজ্য চাইলেও রাইস মিলারদের সমস্যার ব্যাপারে কেন্দ্রই বাংলার কোনো কথাই শুনতে চাইছে না।