বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান রেল স্টেশনে শতাব্দী প্রাচীন জলের সুউচ্চ ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার পরে টনক নড়ল রেল কর্তৃপক্ষের। পূর্ব রেলের সমস্ত ট্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভাবনা রেলের। নিরাপত্তার স্বার্থে ট্যাঙ্ক এলাকায় থাকা বস্তিবাসী ও দোকানদারের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে জানাগেছে, হাওড়া, মালদা, আসানসোল ও শিয়ালদহ ডিভিশনের সব স্টেশনে পুরনো জল ট্যাঙ্কগুলি আধুনিক পদ্ধতিতে ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করা হবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মে বুধবার দুপুরে ভেঙে পড়া জল ট্যাঙ্কের জায়গাটি খতিয়ে দেখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় এখনও ১১ জন জখম বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, হাওড়া ডিভিশনে প্লাটফর্মের উপরেই ৩ টি, স্টেশন চত্বরে ১৪টি ও আবাসন এলাকায় ৩৫টির মতো পুরনো জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। বর্ধমানের ৮ নম্বর প্লাটফর্মের ঠিক বাইরে ১৯৩৫ সালে তৈরি একটি জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। রেলের একটি সূত্রে জানা গেছে, ‘লেজার ফোটোমেট্রিক মেজ়ারমেন্ট সিস্টেম’ (এলপিএমএস)-র মতো বা আরও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ট্যাঙ্কের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করা হবে। সে জন্যে আইআইটি বা অন্য কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নিতে পারে রেল। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ট্যাঙ্কটি কত গ্যালন জল ধারণ করতে পারবে, তার জেরে ট্যাঙ্কের ভিতরে ক্ষয়ের পরিমাণ কী রকম, কাঠামোয় কতটা চাপ পড়ছে, সেই চাপ বহন করার ব্যাপারে ট্যাঙ্কের পিলারগুলির ক্ষমতা ঠিক কোন পর্যায়ে তারই তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বুধবার দুপুরে বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ১৩৩ বছরের পুরনো ট্যাঙ্কটির দু’দিকের লোহার চাদর ভেঙে পড়ে। জলের তোড় ও লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ছাউনি ভেঙে পড়লে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যান। অন্তত ৩৪ জন জখম হন। শুক্রবার বেশ কয়েকজন জখম যাত্রীকে সুস্থ করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখনও ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। ছ’বছরের এক বালিকার অস্ত্রোপচার হবে। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। দু’এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, শুক্রবার রেলের তদন্তকারী দল কয়েকজন জখম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেছেন। তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার দিনভর তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ও রেলের আধিকারিকদের বয়ান নথিভুক্ত করেন। একাধিক রিপোর্টও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। রেলের কর্তাদের দাবি, আর কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্তকারীরা ডিআরএম (হাওড়া)-কে রিপোর্ট জমা দেবেন।