বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সম্ভবত রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের কাছে নজীর সৃষ্টি করল বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ হাইস্কুলের ছাত্র সাগর চন্দ। এবছর উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে কাউন্সিলের ইতিহাসে প্রতিবন্ধকতা তথা বিশেষভাবে সক্ষম হিসাবে সাগর প্রথম স্থান দখল করল। যদিও রাজ্যের সাধারণ মেধা তালিকায় তার স্থান দশম। আর খোদ সাগরের প্রতিক্রিয়ায় – সে চায় তার পরিচয় হোক সে রাজ্যে দশম স্থান অধিকারী। বিশেষভাবে সক্ষম হিসাবে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার – এই পরিচয় সে চায় না। পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের সগড়াই গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা তাপক কুমার চন্দ এবং জয়শ্রী চন্দের একমাত্র ছেলে সাগর চন্দ। জন্মের পর থেকেই তার একটি পায়ের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু যতই সে বড় হয়েছে ততই সে ওই সমস্যাকে অবজ্ঞা করতে শুরু করে। খেলাধূলা তার ভীষণ ভালো লাগার বিষয় হলেও পায়ের সমস্যার জন্য সে পায়ে বিশেষ জুতো পরে এখনও ক্রিকেট খেলে। আক্ষরিক অর্থে সে বিশেষভাবে সক্ষম হলেও কোনোরকম সরকারী সুযোগ সুবিধা, এমনকি প্রতিবন্ধকতা নিয়েও সে চায়না কোনোরকম সুযোগ সুবিধা নিতে। বাসে ট্রেনে যেখানেই হোক না কেন – একেবারেই সাধারণ যাত্রীদের মতই সে যাতায়াত করে। সাগর চন্দ এবার উচ্চমাধ্যমিকে যুগ্ম ভাবে দশম স্থান অধিকার করেছে। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের ছাত্র সাগর চন্দের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬। শতাংশের হিসেবে ৯৭.২। সাগরের মা জয়শ্রী চন্দ জানিয়েছেন, মাধ্যমিকে মাত্র ২ নম্বরের জন্য সাগর দশম স্থান অধিকার করতে পারেনি। সেই আক্ষেপ তার মধ্যে ছিলই। যদিও ইতিমধ্যেই সে ব্যাঙ্গালোরে আইআইটি তে সুযোগ পেয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে দশম স্থান পাওয়ায় খুশী মা এবং রেলে কর্মরত বাবা তাপস কুমার চন্দ। সোমবার যখন উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে সেই সময় সাগর দুর্গাপুরে আইআইটির এ্যাডভান্স পরীক্ষা দিতে গেছে। মা জয়শ্রী চন্দ জানিয়েছে, ছেলের পড়াশোনার জন্যই তাঁরা বর্ধমানের শাঁখারীপুকুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছেন। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে গোটা রাজ্যের মধ্যে নজীর সৃষ্টি করায় বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সাগর মনের জোরে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করেছে। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মধ্যে রাজ্যে সাগর প্রথম। তবুও চায় না ওটা তার পরিচয় হোক। তার ইচ্ছা দশম স্থান পেয়েছে এটাই সকলে বলুক বা এটাই হোক তার পরিচয়। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের একতলা বা দোতলা যেখানেই হোক যাতায়াতে ওর কোন সমস্যা হলেও সেটাকে সে কোনোদিনই গুরুত্ব দেয়নি। জয়শ্রীদেবী জানিয়েছেন, সাগর চায় না তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাটা সামনে আসুক। বরং আলোচনা হোক তাকে সাধারণ ছাত্র হিসাবে দেখেই। সাগর আর পাঁচটা ছেলেমেয়েদের থেকে কোন ক্ষেত্রেই আলাদা নয়। তিনি জানিয়েছেন, ৯জন গৃহশিক্ষক ছিল তার। দিন নয় প্রতিদিন রাত্রি ১১টা থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত ছিল তার পড়ার সময়। পরিবর্তে দুপুরে সে ঘুমাতো। একেবারে নিরিবিলিতেই সে পড়ত। সাগর চায় ভবিষ্যতে রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে। জয়শ্রীদেবী জানিয়েছেন, সোমবার দুর্গাপুরের কাঁকসায় আইআইটির জেইই এ্যাডভান্স পরীক্ষা ছিল। তাই এদিন তিনই সাগরের হয়ে স্কুলে আসেন মার্কসিট নিতে।
Tags Burdwan Municipal High School Higher Secondary Examination Result Physically challenged
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …