গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই অবৈধ বালি কারবার-সহ সরকারি জমি জবর দখল এবং বেআইনি নির্মাণ নিয়ে বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রধান পরেশ চন্দ্র সরকার সরব হতেই হাতেনাতে ফল পেল প্রশাসন। গত বুধবার বর্ধমানের একটি স্কুলে জল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে রীতিমতো এই বেআইনি কারবার নিয়ে নিজের ক্ষোভ উজার করে দেন পুরপতি। আর তাঁর বক্তব্যের পর শুক্রবার সকালে একযোগে বর্ধমান, গলসী এবং খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ আচমকা অভিযান চালিয়ে গলসীর জুজুটি এলাকায় পুরসভার অম্রূত প্রকল্প এলাকা থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের দায়ে গ্রেপ্তার করল ১২ জনকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৬টি ট্রাক্টর-সহ তিনটি ট্রলিও। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নজরদারি চলছিল পুরসভার এই ৩০০ কোটি টাকার অম্রুত প্রকল্পের এলাকায়। অবৈধ বালি কারবারিরা বেশ কয়েকবার নৌকা করে নদীর উপর দিয়ে পালাতে সক্ষম হলেও শেষ রক্ষা হলো না এবার। ফাঁদ পাতা হয়েছিল গুছিয়েই। এদিন ভোর রাত্রে বর্ধমান থানা, খন্ডঘোষ আর গলসী থানার যৌথ বাহিনী গোপন সূত্র মারফত বেআইনিভাবে বালি খননের খবর পেয়ে এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে জুজুটির দামোদর নদীর ঘাটে একটি বিশেষ অভিযান চালায়। পুলিশের জালে ধরা পড়ে সেখানে অবৈধ এবং বেআইনি বালি খননে যুক্ত ১২ জন। বাজেয়াপ্ত করা হয় ছটি ট্রাক্টর-সহ তিনটি ট্রলি। বর্ধমান থানা এবং গলসী থানা দুই জায়গাতেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে দুটি কেস শুরু করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৭৯, ৪১১, ৪১৩, ৪১৪ ও ১২০ বি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এদিন পুরপ্রধান পরেশ সরকার জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বর্ধমান পুরসভার ইনফিলট্রেশন গ্যালারির আশপাশ থেকে নৌকা করে অবৈধভাবে বালি তোলা হচ্ছিল। ফলে ৩০০ কোটি টাকার অম্রুত প্রকল্প নিয়ে শংকায় ছিলেন। যেভাবে বালি তোলা হচ্ছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, জুজুটির এই দামোদর থেকে জল উত্তোলন করে তা পরিশুদ্ধ করে শহরের ১০টি রিজার্ভারের মাধ্যমে শহরবাসীকে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পুর এলাকার ৫০ হাজার পরিবারে এই জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অবৈধ বালি তোলার জন্য ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সংকটে পড়েছে। পরেশবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য দপ্তর-সহ জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারকেও বৃহস্পতিবার জানান। তাঁর অভিযোগ পেয়েই পুলিশ আজ অভিযান করেছে। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে পুলিশের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাঁর অভিযোগ পেয়েই পুলিশ প্রশাসন এদিন অভিযান চালিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, প্রায় ২-৩ মাস আগে এই এলাকা থেকে একটা অভিযোগ পেয়ে তাঁরা হানা দিয়েছিলেন। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার এবং কিছু গাড়ি সিজ করা হয়েছিল। এরপর বৃহস্পতিবার পুরপতি অভিযোগ জানানোর পর এদিন ভোরে তাঁরা হানা দিয়ে ১২জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। ৬টি ট্রাক্টর ও ৩টি ট্রলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০টি নির্দিষ্ট কেস করা হয়েছে। ৫০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩০০ গাড়িকে অতিরিক্ত বালি নিয়ে যাবার জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গোটা জেলা জুড়েই এই অভিযান চলছে। এছাড়াও জুজুটি এলাকায় তাঁরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছেন।
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …