বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির ডাকা ব্যবসা ধর্মঘটের জেরে বাজার থেকে কার্যত উধাও আলু। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ধর্মঘট। হিমঘর থেকে আলু বের না করায় রাজ্য জুড়েই বাজার গুলোতে পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব। হিমঘর অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় গড়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ প্যাকেট আলু হিমঘর থেকে বের হয়, সেখানে শুধুমাত্র কৃষকদের রাখা নিজেদের খাবার জন্য কয়েক বস্তা করে আলু বের করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কোনোরকম আলু হিমঘর থেকে বের না করায় কার্যত হিমঘরের সেডগুলি খালি পড়ে আছে। ব্যবসায়ীরা হিমঘর থেকে আলু বের না করায় তার প্রভার সরাসরি বাজারগুলিতে পড়েছে।
বর্ধমানের আলুর আড়তদার রামেশ্বর সাউ জানিয়েছে, গড়ে ৫০ বস্তা করে আলু কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করেন। তাঁর স্টকে যেকটি প্যাকেট আলু ছিল তা দিয়ে সোমবারের বাজার কোনোমতে সামাল দিতে পারলেও যদি ধর্মঘট না ওঠে তাহলে মঙ্গলবার থেকে আলু বিক্রি করতে পারবেন না। তাঁর স্টকে আর কোনও আলু নেই। খুচরো আলু বিক্রেতা অমিত তালুকদার জানিয়েছেন, আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট চলছে। তাঁদের ধর্মঘট উঠলে বাজারে আলুর দাম স্বাভাবিক হবে। বাজারে আলু আসছে না, যোগান কম, ফলে গতকাল থেকে সোমবার বস্তা প্রতি ১৫০০ টাকা আলুর দাম হয়েছে। ৩৩-৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার এই ধর্মঘট না উঠলে আলুর দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি উত্তম পাল জানিয়েছেন, বাজারে আলুর যোগান অবশ্যই কমবে, কিছু করার নেই। এরজন্য দায়ী সরকার। দামও বৃদ্ধি পাবে। ফাটকাবাজি করার জন্য কিছু ব্যবসায়ীতো আছেনই। তিনি জানিয়েছেন, আলু ব্যবসায়ীরা হিমঘরের গেটে আলু বিক্রি করেন ১৩৫০ টাকা বস্তা, অর্থাৎ ২৭ টাকা কেজি দরে। সেই আলু যদি বাজারে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে খুচরো বাজারে বিক্রি হয় তারজন্য কি আমরা দায়ী? উত্তম পাল জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যবসার সবটাই অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা যে আলুগুলো রাখেন তার সবটা পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হওয়ার মত নয়। এবছর আলুর মান এমনিতেই খুব খারাপ। বেশীরভাগটাই ছোট সাইজের আলু হয়েছে। কলকাতার বাজারে যে আলু বিক্রি হয় ১০০ প্যাকেট আলু ফেললে ৪০-৫০ প্যাকেট আলু কলকাতা যাওয়ার মত আলু তৈরি হয়। বাকি যে আলু পরে থাকে তারমধ্যে মাঝারি, ক্যাট, নষ্ট আলু থাকে। সেই আলুগুলো বাংলায় বিক্রি হবে না। সেগুলিকে বিহারে পাঠান হয়। সেই আলুগুলো বিহারে যেতে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এখন তাঁরা ওই ৫০ শতাংশ নিম্নমানের আলু কোথায় বেচবেন? -এই প্রশ্নের উত্তর তাঁরা খুঁজছেন। তাঁরা এই আলু ফেলেও দিতেও পারবেন না। এগুলো কম দামে বিক্রি হয়। অন্যরাজ্যে পাঠান হয়। সেটাই আটকে দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য রাজ্যে এই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। উত্তম পাল জানিয়েছেন, সরকার তাঁদের ডেকে সুষ্ঠু আলোচনা করে লিখিত দিলেই কর্মবিরতি উঠে যাবে। বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ঝাড়খণ্ড সমস্ত বর্ডার আটকে দেওয়া হয়েছে। কোনও লিখিত অর্ডার দেখাতে পারছেন না, গাড়ি আটকে শুধু হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, আলুর যে বেশি দাম বলা হচ্ছে, সেটাও ঠিক নয়। এবার হিমঘরে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু লোড হয়েছে। এর সাথে স্টোর ভাড়া, শ্রমিক, রঙ, সুতলি-সহ বিভিন্ন খাতে ৪ টাকা প্রতি কেজিতে খরচ আছে। নগদ ১২৫ টাকা লাগে। সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে লাভ করতে গেলে এই দামে বিক্রি করতেই হবে বলে জানান উত্তম পাল।