Breaking News

‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ সুর বিকৃতির অভিযোগ, প্রতিবাদ বর্ধমানে

Protest in Burdwan town against Pippa movie music director AR Rahman. On the charge of distorting Nazrul's song.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানের সুর বিকৃতির অভিযোগে বর্ধমান আয়োজিত হলো প্রতিবাদ সভা। এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশ প্রেমের পটভূমিকায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লেখেন, ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট / ভেঙ্গে ফেল্, কর্‌ রে লোপাট / রক্ত-জমাট / শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী!’
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কারাগারে থাকাকালীন তাঁর পত্নী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে নজরুল ইসলাম গানটি লিখেছিলেন। এই গানের সুর কবি নিজেই দিয়েছিলেন। ১৯৪৯ সালে কলম্বিয়া রেকর্ড এবং ১৯৫০ সালে এইচ.এম.ভি.-তে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গানটি ছিল বিশেষ প্রেরণার। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধেও এই গান ছিল সংগ্রামীদের কণ্ঠে। Protest in Burdwan town against Pippa movie music director AR Rahman. On the charge of distorting Nazrul's song.
১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’ চলচ্চিত্রে গিরিন চক্রবর্তীর গাওয়া ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি ব্যবহার করা হয়।
বিদ্রোহী কবির ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি সম্প্রতি হিন্দী সিনেমা ‘পিপ্পা’-য় (Pippa) ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের বিরুদ্ধে মূল সুরকে বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে সারা ভারতে বিতর্কের ঝর উঠেছে। বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার বাঙালীদের মধ্যে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রবল প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। আর এই সুর বিকৃত করার প্রতিবাদে বর্ধমান শহরেও রাস্তায় নামলেন মানুষজন। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের কার্জনগেট চত্বরে ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানের সুর বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করা হয়। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত গিরীন চক্রবর্তীর কন্যা বিশিষ্ট গায়িকা চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী, প্রবীণ লেখক গৌরীশঙ্কর দাস, সাংবাদিক কানাইলাল বিশ্বাস, গায়িকা অনামিকা কোনার, বন্দনা সাধু খান, শম্পা মহন্ত, শতভিসা ঘোষ, সাংবাদিক শেখ মহম্মদ হাজ্জাফুল আলম প্রমুখ এদিনের এই প্রতিবাদ সভার প্রধান উদ্যোগে ছিলেন। এদিন বক্তব্য, কবিতা এবং আলোচিত গানটি সমবেতভাবে গাওয়ার মাধ্যমে সোচ্চার হন বিভিন্নি শ্রেণীর মানুষজন। Protest in Burdwan town against Pippa movie music director AR Rahman. On the charge of distorting Nazrul's song.
বর্ধমানের সংগীতশিল্পী, কবি, আবৃত্তিকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সমর্থন জানান। সংগীতশিল্পী চন্দা চট্টোপাধ্যায়, মণিদীপা মজুমদার, স্বাতী তেওয়ারি, সোমা ভট্টাচার্য, চন্দনা সরকার, লিলি দাস, বন্যা বসু, স্বপ্না মোহন্ত, সৌমিলি বসু, অনামিকা কোনার, করবী রায়, শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী, গৌরীশঙ্কর দাস, কানাই লাল বিশ্বাস, সঞ্চিতা দাস, সংহিতা মুখোপাধ্যায়, যমুনা চ্যাটার্জী, সুমিত্রা ভট্টাচার্য, মুক্তা রায়, শ্রাবণী কুন্ডু, উৎপলিকা অধিকারী, রিঙ্কু দে, মানসী মিত্র, উমা গুপ্ত, শিপ্রা সিনহা দাস, সবিতা চক্রবর্তী প্রমুখ প্রতিবাদের সমর্থনে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। কাশীনাথ গাঙ্গুলি, অরবিন্দ সরকার, উদয় ঘোষাল, মোশাররফ আজম, সমাপ্তিকা মন্ডল, রীনা কুন্ডু, সুনীল চক্রবর্তী, রুণু অধিকারী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। আবৃত্তি করেন দেবনাথ মুখার্জী, ভবতোষ দাস, অভিজিৎ দাশগুপ্ত, রীণা কুন্ডু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন চন্দা চট্টোপাধ্যায়, কানাইলাল বিশ্বাস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শেখ জাহাঙ্গীর। প্রতিবাদ সভা শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রাম শঙ্কর মন্ডল। Protest in Burdwan town against Pippa movie music director AR Rahman. On the charge of distorting Nazrul's song.
গৌরী শঙ্কর দাস জানিয়েছেন, “১৯৪৯ সালে গিরীণ চক্রবর্তীর কন্ঠে এই গানটি প্রথম রেকর্ডিং করা হয়। এই সুরের গানটি স্বাধীনতা আন্দোলন ও পরবর্তী ভাষা আন্দোলনের মূল মন্ত্র ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের সময়ও এই গানটি বাঙালিদের কাছে যেমন ছিল শক্তি ও সাহসের মূলমন্ত্র সেই রকম আসামে বাঙালিরা এই মূল মন্ত্রেই সোচ্চার হয়েছিলেন বাঙলা ভাষা রক্ষার্থে। পুরুলিয়ার ভাষা আন্দোলনের শক্তি জোগায় নজরুল এই গানটি। আর তাই সেই গানের সুর বিকৃতি মানতে না পেরেই এদিনের এই প্রতিবাদ।”

Protest meeting in Burdwan city against AR Rahman, the music director of Pippa movie, on the charge of distorting Nazrul's song.
চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন সঠিক সুরে গানটি নতুনভাবে গাওয়ানোর পরই সিনেমায় ব্যবহার করা হোক, তা নাহলে এই সিনেমা থেকে গানটি বাদ দিয়ে দেওয়া হোক। যদিও এদিন চন্দা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই অবস্থায় তাঁদের দুটো দাবিই মানা হবে না বলে তিনি মনে করছেন। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে চাপ তৈরী করতেই এদিনের কর্মসূচী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গিরীন কন্যা চন্দা চট্টোপাধ্যায়।
কানাইলাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিকের মাধ্যমে লিখিত ভাবেই তাঁদের প্রতিবাদপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেরণ করবেন।

প্রতিবেদক – অপূর্ব দাস এবং কিশোর মাকর

 

——————————————————

About admin

Check Also

The fifth short film festival was organized in Burdwan

বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *