বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এবার স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্কুলের পড়াশোনাকে শিকেয় তুলে দিয়ে চুটিয়ে প্রাইভেট টিউশন পড়ানোর প্রতিবাদে আইনের ধারাকে সঙ্গে নিয়েই জোরদার আন্দোলনে নামতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির বর্ধমান জেলা ইউনিট। রবিবার বর্ধমান শহরের নীলপুরে সংগঠনের এক সভায় এব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হল। সংগঠনের বর্ধমান জেলা সম্পাদক রাজেশ সামন্ত জানিয়েছেন, সরকারী আইন অনুসারে (R.T.E. Act Sec. 28 West Bengal Vide Notification no.- 214-SE/S-10M-01/18, date 08/03/2018) স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন করাতে পারেন না। তা করলে দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বর্ধমান জেলাতেও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে যাচ্ছেন চুটিয়েই। এর মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকার কালোবাজারি হচ্ছে। কারণ প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে তাঁরা যে রোজগার করছেন তা সম্পূর্ণ কালো টাকা। পরিসংখ্যান দিয়ে রাজেশবাবু জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের একটি অঞ্চলেই মাসে সাড়ে সাত কোটি টাকার এভাবেই কালো টাকার কারবার হচ্ছে। তিনি জা্নিয়েছেন,এবার তাঁরা সরকারী এই আইনকে সঙ্গে নিয়েই রাস্তায় নামতে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারী তাঁরা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে এব্যাপারে স্মারকলিপি দিয়ে ব্যবস্থা নেবার আর্জি জানাবেন। স্কুল পরিদর্শকের হাতে তুলেও দেওয়া হবে সরকারী স্কুলের শিক্ষকতা করা সত্ত্বেও যাঁরা প্রাইভেট টিউশন করে যাচ্ছেন তাঁদের তালিকাও। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতির কাছেও সেই স্কুলের কোন কোন শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন পড়াচ্ছেন তাঁদের তালিকা তুলে দিয়ে অনুরোধ জানাবেন তাঁদের এই কাজ থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু তারপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় থানায় এফআইআর দায়ের করবেন। তিনি জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠকেই সদস্যদের প্রতিটি স্কুলের কোন কোন শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন পড়াচ্ছেন তার হিসাব জমা দিতে বলেছেন। রাজেশবাবু জানিয়েছেন, যেহেতু সরকারীভাবে শিক্ষকরা স্কুলে শিক্ষাদান করার জন্য সরকারীভাবে অর্থ নিচ্ছেন কিন্তু তাঁরা তাঁদের কর্তব্য পালন করছেন না তাই তাঁদের বিরুদ্ধেই তাঁরা এফআইআর করতে চান। উল্লেখ্য,ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে শহর জুড়ে এব্যাপারে সাবধান বাণী লিখে পোষ্টার ও লিফলেট ছড়ানো হয়েছে প্রতিটি স্কুলের সামনে। গত ডিসেম্বর মাসেই পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির বর্ধমান জেলা ইউনিট গঠিত হয়েছে।
রাজেশবাবু দাবী করেছেন, ইতিমধ্যেই কেবলমাত্র বর্ধমান শহরেই প্রায় ২৫০–রও বেশি গৃহশিক্ষক তাঁদের সদস্যভুক্ত হয়েছেন। আগামী দিনে জেলার অন্যান্য মহকুমাতেও তাঁরা সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা অরাজনৈতিক সরকারী নিবন্ধীকৃত সংগঠন। আগামী দিনে গৃহশিক্ষকদের অন্যান্যদাবী দাওয়া নিয়েও তাঁরা আন্দোলনে নামতে চলেছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত তাই তাঁরা সমস্ত আন্দোলনই করতে চান আইন ও গণতন্ত্র মেনেই। উল্লেখ্য, বাম আমলে একবার এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই–এর পক্ষ থেকে শিক্ষকদের এই প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও তা অজ্ঞাত কারণেই বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ কয়েকবছর পর ফের গৃহশিক্ষক এই সংগঠন একইদাবীতে রাস্তায় নামতে চলার খবরে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে শহর জুড়েই। কারণ কেবলমাত্র বর্ধমান জেলাতেই বহু শিক্ষক ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চুটিয়ে প্রাইভেট টিউশন করে যাচ্ছেন। রাজেশবাবু জানিয়েছেন,খুব শীঘ্রই তাঁরা ওই সমস্ত শিক্ষকদের তালিকা জনসমক্ষে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন।