বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় সার্কিট ট্যুরিজম চালুর কথা ঘোষণা করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এতটুকুও কাজ এগোয়নি এই সার্কিট ট্যুরিজম নিয়ে। এমনকি কলকাতার যে এনজিও ‘ফ্রেন্ডস ইন নিড অ্যান্ড ডিড’ (এফআইএনডি)-কে এই সার্কিট ট্যুরিজমের ওয়েবসাইট তৈরি এবং সমগ্র বিষয়টি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁরা কার্যত কোনো কাজই করেনি বলে অভিযোগ। শুধু এটাই নয়, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় আক্ষরিক অর্থেই ট্যুরিজম দপ্তর বলে যা বোঝায় সেখানে একজন ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দিয়ে চলছে দপ্তর। নেই অন্য কোনো কর্মী। আস্ত একটি দপ্তর চলছে মাত্র একজন অফিসারকে নিয়ে। ওই দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতবছর ১৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা আনুষ্ঠানিকভাবে এই সার্কিট ট্যুরিজম বিষয়ে প্রোমোশনাল একটি ভিডিয়োর উদ্বোধন করেন। তিনি ঘোষণাও করেন, পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে চালু হচ্ছে সার্কিট ট্যুরিজম। প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর আগেই বর্ধমান শহর এবং আউশগ্রাম ১ ও ২ ব্লক জুড়ে চালু হয়ে যাবে সার্কিট ট্যুরিজম। তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন দ্রষ্টব্য ঐতিহাসিক, ধর্মীয় স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মস্থান প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে প্রোমোশনাল ভিডিয়োটির উদ্বোধন করেন। সেইসময় জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, একটি সংস্থাকে জেলার এই সার্কিট ট্যুরিজমের বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, টেন্ডারে অংশ নিয়ে এই সংস্থা দায়িত্ব পেয়েছে। ইচ্ছুক ভ্রমণ পিপাসুরা পূর্ব বর্ধমান জেলার সরকারি ওয়েবসাইট ঢুকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ওয়েবসাইট লিংকে ক্লিক করে অথবা সরাসরি ওই সংস্থার তৈরি ট্যুরিজম ওয়েবসাইটে গিয়ে এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, এই পর্যটনের ক্ষেত্রে ১ দিন, ২ দিন ১ রাত, ৩ দিন ২ রাত প্রভৃতি নানাভাবে ভাগ করে প্যাকেজ করা হয়েছে। পর্যটকদের থাকা, খাওয়া এবং ঘোরার ব্যবস্থা করবে সংস্থাটি। লক্ষ্য ছিল, শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলাই নয়, তার সঙ্গে পাশের জেলা বোলপুর ঘোরানোরও ব্যবস্থা থাকবে এই সার্কিট ট্যুরিজমের মধ্যে। প্রথম ধাপে বর্ধমান শহর এবং আউশগ্রাম ১ ও ২ ব্লক নিয়ে পুজোর আগে এই সার্কিট ট্যুরিজম চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে কালনা, কাটোয়া মহকুমা-সহ জেলার অন্যান্য জায়গাও এর সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণা ঘোষণাই থেকে গেছে। দায়িত্ব প্রাপ্ত ওই সংস্থা কোনো কাজই করেনি। আরও অবাক করার ঘটনা, বারবার জেলা প্রশাসন থেকে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো কানই দেননি। এমনকি চলতি সময়ে তাঁরা কোনো ফোনও ধরছেন না। এমতাবস্থায় ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা ট্যুরিজম দপ্তর। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাস থেকেই কার্যত চলছে পর্যটক তথা ভ্রমণ পিপাসুদের বেড়ানোর আগ্রহ। সেক্ষেত্রে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দ্রষ্টব্য স্থান। যাকে নিয়েই একটি সার্কিট ট্যুরিজমের ভাবনা নেওয়া হয়। কিন্তু সেই কাজে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার ট্যুরিজম নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের ট্যুরিজম দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মহম্মদ হোসেন চৌধুরি জানিয়েছেন, তাঁরা এই জেলার পর্যটন বিষয়ে আগ্রহ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। সার্কিট ট্যুরিজমের বিষয়ে তাঁদের দিক থেকে যতটা কাজ করার কথা সবটাই তাঁরা করছেন, কিন্তু ওই সংস্থার জন্যই এখনও থমকে আছে। তাঁরা ওই সংস্থার সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগের চেষ্টা করে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তাঁদের নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে হচ্ছে। তবে জেলার পর্যটনের উন্নয়নের প্রচেষ্টায় জেলাপ্রশাসন কোনও রকম খামতি রাখেনি বলে জানিয়েছেন মহম্মদ হোসেন চৌধুরি। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলে ফোন ধরেননি। মহম্মদ হোসেন চৌধুরি জানিয়েছেন, পর্যটনের উন্নয়নে জেলার ৬টি জায়গাকে পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্ব বাড়াতে রাজ্য ট্যুরিজম দপ্তরের কাছে তাঁরা প্রস্তাবাকারে পাঠিয়েছেন। এই ৬ টি জায়গার মধ্যে রয়েছে রায়নায় কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর বসত ভিটেকে কেন্দ্র করে মিউজিয়াম, খন্ডঘোষের তোড়কোনার রাসবিহারী ঘোষের জন্মস্থান, একলক্ষীতে সাহাচাঁদ পিরের মাজার, কালনা ১ ব্লকের চাঁদ বিল ইকো ট্যুরিজম পার্ক, কাটোয়ার সিঙ্গিতে কাশীরাম দাসের জন্মভিটে, বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কড়চা কবি গোবিন্দ দাসের জন্মভিটে প্রভৃতি।
—————————————————————————————————————————-