বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সরকারী নিষেধাজ্ঞা থেকে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বারবার নিষেধ অমান্য করেই ওভারলোর্ডিং বালি ও পাথর পাচারের কাজ চলছেই রমরমিয়ে। সরকারী নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই একশ্রেণীর পুলিশ ও সরকারী কর্মীদের প্রচ্ছন্ন মদতেই চলছে এই কারবার – যা নিয়ে দফায় দফায় নালিশ জমা পড়েছে জেলা প্রশাসন থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। একদিকে, সরকারী নিষেধাজ্ঞা মেনে আইনানুসারে বালি ও পাথর বোঝাই করার চেষ্টা, অন্যদিকে রাস্তায় রাস্তায় জায়গায় জায়গায় তোলার টাকা দিতে গিয়ে সেই ওভারলোর্ডিং-এর ঝুঁকিই নিচ্ছেন চালক থেকে মালিকরা। ফলে রমরমিয়েই চলছে এই কারবার। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলায় নতুন পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। আর সোমবার জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) প্রণব কুমার বিশ্বাস, জেলা পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিক আবরার আলম সহ প্রায় এক ডজন আধিকারিকদের নিয়ে সাতসকালেই আচমকা হানাদারি চালানো হয় কয়েকটি জায়গায়। হাতেনাতেই ফল পেলেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। বেপরোয়াভাবেই যে এই ওভারলোর্ডিং-এর কারবার চলছে তা এদিন দেখে এই কারবার বন্ধের জন্য প্রতিদিনই হানাদারি চালানোর কথা ঘোষণা করেছেন জেলাশাসক। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমস্ত নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও গোটা জেলা জুড়েই চোরাগোপ্তা অবৈধ বালির কারবার চলছেই। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব এদিন জানিয়েছেন, এদিন সকালে আচমকা অভিযান চালিয়ে ৩০টি বালি ও পাথর বোঝাই ওভারলোর্ডিং গাড়িকে আটকানো হয়েছে। আটক করা হয় ৫টি ট্র্যাক্টরকেও। মোট ৩৫টি গাড়ি থেকে ১২ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ২০০টি বৈধ বালিঘাট রয়েছে। তা থেকে চলতি বছরে ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বছরে ৪০ কোটি টাকা রয়্যালটি বাবদ তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) প্রণব কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, সোমবার সকাল প্রায় ৫টা নাগাদ জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিক প্রমুখদের নিয়ে বর্ধমান আরামবাগ রুটের বাঁকুড়া মোড়ে প্রথম হানা দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে পালসিট এবং চাঁচাই মোড়েও তাঁরা হানা দেন। ৩টি জায়গা থেকে মোট ৩০টি ওভারলোর্ডিং বালি ও পাথর বোঝাই লরী এবং ৫টি ট্র্যাক্টরকে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রণববাবু জানিয়েছেন, এই অভিযান লাগাতার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ দিয়েও গাড়ি চালক তথা মালিকরা জানিয়েছেন, ওভারলোর্ডিং মাল পরিবহণের ক্ষেত্রে তাঁদের বড়রকমের ঝুঁকি থাকে। একদিকে দুর্ঘটনা, অন্যদিকে, গাড়িরও ক্ষতি হয়। কিন্তু যেভাবে রাস্তার জায়গায় জায়গায় পুলিশকে তাদের অবৈধভাবেই টাকা দিতে হয় তাতে কার্যত লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যাবার জোগাড় হয়। আর সেখানেই যত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারণ পুলিশকে টাকা না দিয়ে বৈধ চালান কেটে নির্দিষ্ট বৈধ পরিমাণে বালি বা পাথর নিয়ে গেলেও পুলিশকে টাকা দিতেই হয় – এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিকরা জানিয়েছেন, তাঁরা এব্যাপারে বারবার বিভিন্ন দপ্তর থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। তাই প্রশাসন যদি সত্যিই ওভারলোর্ডিং বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়, তাতে আখেরে লাভ তাঁদেরই। কিন্তু আদপেই তা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েই তাঁদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
Tags Barddhaman Bardhaman Burdwan illegal sand mining Khandaghsh Memari Palsit sand sand mining
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …