বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- চলতি সময়ে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েও কাটমানি নিয়ে রীতিমত চাপান উতোরের মাঝে আচমকাই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো। যদিও তাঁর বসবাসকারী এলাকা সূত্রে জানা গেছে, এলাকাগতভাবে তাঁর বাড়িতে ঘেরাও বা কাটমানি নিয়ে কোনোরকম চাপ সৃষ্টির মত কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উল্লেখ্য, ছোটবেলা থেকেই শম্পা ধাড়া তাঁর মাসি মাধবী পাকড়ের কাছে খণ্ডঘোষ থানার শ্যামাডাঙা এলাকাতেই থাকতেন। শম্পা ধাড়ার বাবা মা-সহ পরিবারের অন্যান্যরা থাকেন রায়নার শ্যামসুন্দরের শিবরামপুরে। মাধবী পাকড়ে একটি আইসিডিএসের কর্মীও। তাঁর কাছেই কার্যত ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছেন শম্পা ধাড়া। ফলে তিনি মাসির কাছেই থাকতেন। গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতই শুক্রবার সকালেও মাধবীদেবী তাঁর কাজে বেড়িয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর শম্পা ধাড়ারও জেলা পরিষদে আসার কথা ছিল। যথারীতি তাঁকে আনতে গাড়ি গেলে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীই প্রথম দেখতে পান শম্পা ধাড়াকে অচৈতন্য অবস্থায় ঘরে শুয়ে থাকতে। বার বার ডেকেও সাড়া না পাওয়ায় তিনি দ্রুততার সাথে ওই গাড়িতেই সরাসরি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শাখা অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদিকে, খবর পেয়েই অনাময়ে ছুটে যান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু সহ অন্যান্য কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদের কর্মীরাও। অনাময়ে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর চিকিত্সা শুরু করার পর অবজারভেশন রুমে তাঁকে রাখা হয়। সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন শম্পা ধাড়া। তিনি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। সেজন্য অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেই তাঁর চিকিত্সাও চলছে। তিনি নিয়মিত ওষুধও খান। দেবু টুডু জানিয়েছেন, এদিন চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে তিনি যে ওষুধ খান সেই ওষুধই কোনো কারণে বেশি খেয়ে ফেলার জন্য এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে যেহেতু এদিন তিনি কথা বলার মত পরিস্থিতিতে ছিলেন না তাই যতক্ষণ না তিনি সুস্থ হচ্ছেন ততক্ষণ এব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়। হাসপাতাল সুপার ডা. উত্পল দাঁ জানিয়েছেন, সভাধিপতির নিউরোলজিক্যাল সার্টডাউনের জন্যই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তিনি সুস্থ আছেন। আগামীকাল শনিবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হতে পারে। যদিও ঘুমের ওধুষ মাত্রাতিরিক্ত খাবার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার। যদিও হাসপাতাল সূত্রে খবর, সভাধিপতির এই মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার বিষয়টি যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসে সেজন্য তৃণমূলের উপরমহল থেকেই গোপনীয়তা বজার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, আচমকা সভাধিপতির এই ঘটনায় উঠে এসেছে কাটমানি সহ একাধিক প্রশ্নও। খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয়বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস বর্ধমান জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করার পর সভাধিপতি হিসাবে বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডুই মহিলা আসন হওয়ায় শম্পা ধাড়াকে সহকারী সভাধিপতি থেকে সভাধিপতি করার প্রস্তাব দেন। যথারীতি শম্পা ধাড়া সভাধিপতিও হন। কিন্তু দিন যতই এগিয়েছে ততই ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে শুরু করে সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে শম্পা ধাড়ার। এমনকি কার্যতই জেলা পরিষদের সদস্য এবং কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে দুটি আড়াআড়ি ভাগ স্পষ্ট হতে শুরু করে। যা নিয়ে জেলা পরিষদে শোরগোলও পড়ে। এমনকি দুপক্ষের এই টানাটানির জেরে কার্যত জেলা পরিষদের বিবিধ উন্নয়নের কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সবথেকে লড়াই তুঙ্গে ওঠে জেলা পরিষদের পূর্ত দপ্তরকে নিয়ে। পূর্ত দপ্তরের তথা বিভিন্ন রাস্তার কাজের জন্য টেণ্ডার ডাকা হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, অলিখিতভাবেই পেটুয়া ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেবার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এমনকি সরকারী নিয়মানুযায়ী সর্বনিম্ন দরপত্র দেওয়া ঠিকাদারকেই কাজ দেবার নিয়ম থাকলেও দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেণ্ডার জমা পড়ে নির্ধারিত ব্যয় বরাদ্দের থেকেও বেশি। ফলে সেই টেণ্ডার আটকে দেওয়া হয়। ঠিকাদারদের জানিয়ে দেওয়া সরকারী নিয়ম মেনে সর্বনিম্ন (লেসে) টেণ্ডার পত্র দেবার জন্য। যা নিয়ে রীতিমত জলঘোলা শুরু হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে টেণ্ডার প্রক্রিয়া থমকে যায়। অভিযোগ ওঠে, ইতিমধ্যেই কাজ পাবার জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত গড়ে ওঠে। গোটা বিষয়টি নিয়ে দলের ওপর মহলেও নালিশ জমা পড়ে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ জমা দেয়। এদিকে, এরই মাঝে বৃহস্পতিবার ছিল টেণ্ডার প্রক্রিয়ার মিটিং। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে যে সমস্ত ঠিকাদাররা ব্যয় বরাদ্দের বেশি টাকার টেণ্ডার জমা দেন তাঁদের অনেকেই বরাত পাননি। যাঁরা সর্বনিম্ন (লেসে) দরপত্র জমা দেন তাঁদের মধ্যে থেকেই ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় রীতিমত ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়েন অনেকেই। যদিও এব্যাপারে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, এব্যাপারে জেলা পরিষদের পূর্ত দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্তের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর দুটি মোবাইল ফোনই সুইচ বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে, খোদ সভাধিপতি শম্পা ধাড়া কেন মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেলেন ? তিনি জেনে বুঝেই তা খেয়েছেন কিনা? নাকি না বুঝেই ভুল করে খেয়েছেন – তা নিয়ে জোর জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে জেলা জুড়েই। ঠিক কি কারণে তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তা নিয়ে ক্রমশই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। শম্পা ধাড়ার পরিবারের তরফ থেকে অবশ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাড়িতে গেলে বাড়িতে তালা বন্ধ থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এরই পাশাপাশি গত বুধবার বর্ধমানে আসেন গ্রিভেন্স সেলের আহ্বায়ক কর্ণেল দীপ্তাংশু চৌধুরী। তিনিও পৃথকভাবে সভাধিপতি এবং সহকারী সভাধিপতিকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। খোদ জেলা পরিষদের অন্দরের খবর, বর্তমান সময়কালে যেভাবে জেলা পরিষদের কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। গোটা বিষয়টিকে যে দলের উপরমহলও ভালভাবে নিচ্ছে না তাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এরই মাঝে শম্পা ধাড়ার এই ঘটনা রীতিমত জেলা পরিষদে আলোড়ন তুলে দিয়েছে। জানা গেছে, শম্পা ধাড়া সভাধিপতি হিসাবে আসীন হবার পর সরকারীভাবে তিনটি নিয়োগপত্রও পান চাকরির পরীক্ষা দিয়ে। কিন্তু তিনি তা ছেড়ে দিয়ে সভাধিপতির আসনেই থেকে যান। যা নিয়ে তিনি মানষিক জটিলতার মধ্যেও পড়েন।
Tags Purba Bardhaman Purba Bardhaman Zilla Parishad Sabhadhipati Shampa Dhara
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …