রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- এমন কিছু শিল্প রয়েছে যেগুলিতে মানুষ কাজ করতে উৎসাহ হারাচ্ছেন অথবা এমন কিছু শিল্প যেগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে অথবা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেই সমস্ত শিল্পকে নিয়ে রাজ্য সরকারের শিল্প দপ্তর জোরদারভাবে কাজ শুরু করে দিল পূর্ব বর্ধমান জেলায়। বুধবার থেকে বর্ধমানের সেহারাবাজার এলাকায় জরি ও জারদৌসি ক্লাস্টার –এর প্রশিক্ষণ শুরু হল। পূর্ব বর্ধমানের জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ কর জানিয়েছেন, এব্যাপারে গত বছর কিছুটা কাজ হয়েছিল। এবছর কিছু টাকা এসেছে মার্কেট লিংকেজ, আপগ্রেডেশন ট্রেনিং–এর জন্য। সেই কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, শিল্পীদের রপ্তানি করার মত প্রোডাক্ট তৈরী করার জন্য তাঁরা লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন। শিল্পীরাও তাতে উৎসাহ দেখিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সেহারাবাজার এলাকায় প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি শিল্পী কাজ করেন। এব্যাপারে একই ধরণের অনেকগুলি ইউনিট তৈরী করা হচ্ছে। এব্যাপারে খরচের ৯০ শতাংশ দিচ্ছে সরকার। বাকি ১০ শতাংশ উপভোক্তাকে দিতে হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এই ১০ শতাংশ–তেও রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রধানত ৪ টে ক্লাস্টারের সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভিজিতবাবু জানিয়েছেন, কেতুগ্রাম ২–এর চরসুজাপুর–এ আখেরগুড় তৈরী হয়। কিন্তু এই শিল্পে যুক্ত যাঁরা তাঁরা সেভাবে লাভ দেখতে পাচ্ছেন না। এই দপ্তরের পক্ষ থেকে সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, ওখানে যে আখ চাষ হয়েছে তা থেকে ৭ শতাংশ রস নিষ্কাশন হয়। ওটা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ান যাবে। তারও প্রশিক্ষণ হচ্ছে। পাশাপাশি প্যাকেজিং–সহ সমস্ত বিষয়েয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওখানে ২৫ টা ইউনিট কাজ করছে। এছাড়াও পূর্বস্থলী ১ ব্লকে মেশিনের মাধ্যমে শাড়ীতে এমব্রয়ডারীর কাজ হয়। সেখানে এই শিল্পকে নিয়ে ক্লাস্টার করা হয়েছে। পূর্বস্থলী ২–এ ভেড়ার লোম বা পশম দিয়ে র্যাপার তৈরীর ক্লাস্টার তৈরী হয়েছে। এই শিল্পটি ওই এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। শ্রীরামপুর থেকে ডিজাইনার এনে এই শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এই চারটি ছাড়াও পূর্বস্থলীতে দু চাকার যানের মেরামতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে,বর্ধমানে বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, অভিজিতবাবু জানিয়েছেন, রায়নার সেহারাবাজারে জরি ও জারদৌসির জন্য ক্লাস্টার তৈরী করা হয়েছে। অনেকে জরির কাজ করতে রাজ্য ছেড়ে বাইরে চলে যান। তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও নতুন ডিজাইন, নতুন মার্কেট তৈরী করা লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সি এফ সি (কমন ফেসিলিটি সেন্টার) তৈরী হবে। সেখানে বসে শিল্পীরা কাজ করবেন। এখন ৩৬ ইউনিটে ডিজাইন ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং চালু হয়েছে। ৫০০–এর উপর মানুষ এখানে কাজ করছেন। জরি ও জারদৌসি–এর এই প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোঅপারেটিভ গড়ে দিয়ে কাজ হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি এই জেলার রাইসমিল ক্ল্যাস্টার ১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছে। প্রকল্পটি দিল্লীতে অনুমোদনের পথে রয়েছে। ধানকলগুলি রাইস ব্রাণ্ড বিক্রি করে দেয়। সেগুলি অন্যরা কিনে তেল তৈরী করে। এই প্রকল্প অনুমোদিত হলে রাইসমিল ক্ল্যাস্টার–এ ওরা ইউনিট তৈরী করে নিজেরাই তেল তৈরী করতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ–মিহিদানা রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্যাকেজিং–পিজারভেশন নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। রাজ্য দপ্তরের মাধ্যমে মহিশূরে পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসা এবং সবুজ সংকেত মিললে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত যা করা গেছে তাতে মিহিদানা ১৫–২০ দিন থাকছে, কিন্তু সীতাভোগ লাল হয়ে যাচ্ছে। বেশি পিজারভেটিভ ব্যবহার করলে স্বাদ পালটে যাচ্ছে। রঙ, স্বাদ ঠিক রেখে সংরক্ষণের চেষ্টা চালান হচ্ছে। কারণ এই মিষ্টিগুলির ভাল চাহিদা আছে। তিনি জানিয়েছেন, এছাড়াও বর্ধমান জেলা থেকে ড্রাই অয়েল ব্রাণ্ড, ডোকরা,মাছের আঁশ দিয়ে তৈরী পণ্য, খন্ডঘোষের ফেজটুপি নিয়েও ক্ল্যাস্টার তৈরী করে কাজ করা হবে। প্রসঙ্গত, জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক মৌমিতা চৌধুরী জানিয়েছেন, সেহারাবাজারের জরি ও জারদৌসির জন্য এই এলাকায় ৩৬ জন স্টেকহোল্ডার আছে যারা কোঅপারেটিভ তৈরী করেছেন। সেগুলি নিয়ে একটা ক্ল্যাস্টার তৈরী হয়েছে। শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ডিজাইন নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এটার জন্য ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, কমন ফেসিলিটি সেন্টারের জন্য ৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সেহারাবাজার জরি এণ্ড জারদৌসি প্রোডাক্ট ম্যানুফাকচারিং ইণ্ড্রাষ্ট্রিয়াল ক্লাষ্টার সোসাইটি লিমিটেডের সম্পাদক রামপ্রসাদ পরামাণিক জানিয়েছেন, এই এলাকায় ৩০–৪০টি ইউনিট তৈরী হয়েছে। প্রতিটা ইউনিটে ৫ থেকে ২০ জন কাজ করেন। সেহারা গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬০০–৭০০ শিল্পী রয়েছেন। ৩০–৪০ টা ইউনিট নিয়ে ক্ল্যাস্টার তৈরী হয়েছে। এখন মোট ৬০ টা ইউনিট। এখানকার ১০০ থেকে ১৫০ জন বাইরে কাজ করতে চলে গেছে। আর যাতে না যায় এবং যারা গেছে তারা যাতে ফিরে এসে এখানে কাজ করে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এখানে শাড়ী, চুড়িদার, লেহে
Tags Zardoushi Zardozi Zari Zari & Zardoushi Cluster Zari & Zardozi Zari & Zardozi Cluster জরি জরি জারদৌসি জারদৌসি
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …