গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- তীব্র দাবদাহে জ্বলছে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে দু-এক পশলা বৃষ্টি হলেও রীতিমত খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জেলায়। এদিকে, তীব্র এই গরমের মধ্যেই স্কুল খোলা থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছে ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকরা। বারবার আবেদন নিবেদন করেও গরমের ছুটি বাড়ানোর কোনো অনুমতি না মেলায় তীব্র গরমের মধ্যেই বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেছে কচিকাচারা। সোমবার গলসী-২-এর সাটিনন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলগ্রাম দাসপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া সীতারাম কোড়া এবং বিজয় মূর্মূ নামে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। গরমের জেরে তাঁরা সংজ্ঞা হারায়। গোটা ঘটনায় রীতিমত আতংক ছড়িয়ে পড়ে গোটা স্কুল চত্বরে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, এদিন দুপুরবেলায় স্কুলের টিফিনের সময় খেলা করতে করতে ওই দুই ছাত্র অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জল দিয়ে বাতাস করে জ্ঞান ফেরানো হয়। রীতিমত ক্ষুব্ধ প্রধান শিক্ষক জানিয়েছে্ন, এই স্কুলে প্রায় ২৪০জন ছাত্রছাত্রী। তীব্র গরমের জেরে কমবেশী প্রায়শই ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাঁরা গলসী চক্রের স্কুল পরিদর্শক জয়ন্ত ঢালীর কাছে সকালে স্কুল করার আবেদন জানান। কিন্তু তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন, এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারী তাঁরা নন। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সকালে স্কুল হলে জেলার বহু স্কুলেই এই সংকট দূর হত। অপরদিকে, বেলগ্রামের পাশাপাশি এদিন পাশের গ্রাম চন্দনপুর প্রি-প্রাইমারী স্কুলেও একজন ছাত্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদিকে, এব্যাপারে বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গরমের ছুটি দেওয়া বা সকালে স্কুল করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারী রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর। তাঁরা বিভিন্ন স্কুল থেকে যে অভিযোগ বা সমস্যা পাচ্ছেন তা স্কুল শিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। উল্লেখ্যনীয়, গতবছরও তীব্র গরমের জেরে বর্ধমান জেলার বহু স্কুলই সকালে চালু ছিল। সেই সময় বর্ধমানের জেলাশাসক ছিলেন ড. সৌমিত্র মোহন। মূলত, তিনিই এব্যাপার মানবিক সিদ্ধান্ত নেন। এবারেও একইভাবে অভিভাবক থেকে স্কুলের শিক্ষকরাও চাইছেন ছুটি দেওয়া না গেলেও যাতে সকালে স্কুল চালানো যায় এই গরমের সময়ে তার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। যদিও এদিন অচিন্ত্যবাবু জানিয়েছেন, অনেক স্কুলেই সকালে স্কুল করার দাবী জানানো হলেও অন্য একটি পক্ষ তথা শিক্ষক মহল থেকে পাল্টা দাবী জানানো হয়েছে, যেহেতু তাঁরা অনেক দূর থেকে স্কুলে আসেন তাই সাতসকালেই তাঁরা স্কুলে পৌঁছাতে পারবেন না। ফলে দুয়ের টানাটানি চলছে। এদিকে, শুধু স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং বিশেষত প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চুড়ান্ত কষ্টের মধ্যে স্কুল করাই নয়, বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানার কুড়মুন গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাপলাশি গ্রামের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন লো-ভোল্টেজের দাপটে। সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন বিভাগের কুড়মুন অফিসে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ ২০-২৫ দিন ধরে তাদের এলাকায় লো-ভোল্টেজ চলছে। ফলে চুড়ান্ত ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তাঁরা। বিদ্যুত সরবরাহ ঠিক না থাকায় পানীয় জলেরও সংকট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এক দমবন্ধ পরিবেশ তৈরী হয়েছে গোটা এলাকায়। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন বিভাগের কুড়মুনের স্টেশন ম্যানেজার অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়েছেন। অতি স্বত্ত্বর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক জানিয়েছেন, এই লো-ভোল্টেজের সম্যস্যার কথা তাঁকে কেউ জানাননি। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
Tags Barddhaman Bardhaman Bôrdhoman Burdwan Galsi Kurmun School Student
Check Also
বাংলা আবাস যোজনায় নাম দোতলা বাড়ির মালিক বিধায়কের শাশুড়ি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের
খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির একাধিক বাড়িতে হুকিং …