বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- হোষ্টেলের প্রধান পাচকের স্মৃতিতে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করলেন বর্ধমানের “মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি”-র নিউ ইঞ্জিনিয়ারিং বয়েজ হোস্টেলের ছাত্ররা। বর্তমান ও প্রাক্তনীরা মিলে এই কাজে হাত লাগিয়েছেন। নজীরবিহীন এই মানবতার ঘটনায় রীতিমত বর্ধমান শহর জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার এই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী এই কলেজের চিফ অফ ডাইনিং ফকির চন্দ্র চক্রবর্তী ৮৬ বছর বয়সে বয়স জনিত কারণে প্রয়াত হন। তিনি ছিলেন মহারাজাধিরাজ বিজয় চাঁদ ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি কলেজের হোস্টেল বিভাগের মুখ্যপাচক। কিন্তু হোস্টেলের মুখ্যপাচক হলেও তিনি কলেজের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী, কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এমনকি প্রাক্তন পড়ুয়াদের অতিপ্রিয় মনের মানুষ ছিলেন। সকলের কাছে তিনি ‘ঠাকুরদা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
প্রাক্তন ছাত্র শ্যামল সাউ জানিয়েছেন, প্রায় ৫৭ বছর একটানা কলেজ হোস্টেলে কর্মরত ছিলেন ঠাকুরদা। সকল ছাত্রের এত প্রিয় ছিলেন যে, কোন পড়ুয়া কলেজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি বিদেশ বা ভিন রাজ্যে কর্মরত প্রাক্তনীরাও বর্ধমান বা কাছাকাছি এলাকায় এলে একটিবারের জন্য দেখা করে যেতেন “ঠাকুরদা”র সঙ্গে। ঠাকুরদার বয়স জনিত কারণে মৃত্য হলেও, তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা। ভোলেননি তাঁদের পাচক ঠাকুরদাকে। তাই রবিবার ফকির চন্দ্র চক্রবর্তীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করলেন কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা। হোস্টেল ময়দানে করা হ’ল শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। পাশাপাশি কলেজ হোস্টেলে তাঁদের প্রিয় “ঠাকুরদা”-র আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হ’ল। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, “ঠাকুরদা” সারাটা জীবন যেভাবে হোস্টেলের কার্যত অভিভাবক হয়ে থেকেছেন, দূর-দূরান্তের সাধারণ পরিবার থেকে আসা, অল্পবয়সে বাবা মায়ের কাছ ছেড়ে আসা পড়ুয়াদের মাথায় ছাতা হয়ে থেকেছেন -তার মূল্যায়ন করার ক্ষমতা সত্যিই বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নেই। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরা আনন্দিত, গর্বিতও তাঁদের ঠাকুরদাকে স্মরণীয় করে রাখতে পেরে।