গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মঙ্গলবার বর্ধমান আদালত চত্বরে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। পাঁচিল তৈরিতে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা। বাসিন্দাদের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে আইনজীবী মহলে ক্ষোভ ছড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ কাজকর্ম বন্ধ রাখেন আইনজীবীরা। ফলে, বেশ কিছু মামলার শুনানি বিঘ্নিত হয়। পরে বিশাল পুলিস বাহিনী ও র্যাফ আদালত চত্বরে পৌঁছে উত্তেজিত বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয়। র্যাফের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় মহিলাদের। ঘন্টাখানেক পর পুলিস ও র্যাফের উপস্থিতিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজে হাত লাগায় পূর্ত দপ্তর। পাঁচিল দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আদালত চত্বর ছাড়ে পুলিস ও র্যাফ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালত সংলগ্ন শিমূল পুকুরের দক্ষিণপাড়ে একটি অরক্ষিত জায়গায় রয়েছে। সেখান দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পুকুরের পাড়ে বসবাস করা গোটা তিরিশেক পরিবারের লোকজন যাতায়াত করে। আদালত থেকে ওই অরক্ষিত জায়গা দিয়ে কয়েকবার আসামী পালিয়ে যায়। তাছাড়া বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য আদালতের গেট অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। বিষয়টি জেলা জজের নজরে আনেন আইনজীবীরা। কয়েকমাস আগে তৎকালীন জোনাল জজ বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় আদালত পরিদর্শনে এলে আইনজীবীরা তাঁকেও বিষয়টি জানান। জোনাল জজ জায়গাটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। সেখানে পাঁচিল দেওয়ার জন্য জেলা জজকে বলে যান। সেই সময় পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও অরক্ষিত জায়গায় পাঁচিল তোলায় সম্মতি দেন। এদিন সকালে পূর্ত দপ্তরের লোকজন পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করতেই রে-রে করে ওঠেন পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা। কোনও মতেই যাতায়াতের রাস্তায় পাঁচিল তোলা হবেনা বলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন। বাসিন্দাদের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ত দপ্তরের লোকজনকে বলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বারের প্রতিনিধিরা জেলা জজের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। জেলা জজ বারের প্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। বার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচিল তৈরিতে পুলিসি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা জজ মহম্মদ সাব্বর রশিদি পুলিস সুপারকে ফোন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল পুলিস বাহিনী ও র্যাফ আদালত চত্বরে হাজির হয়। উত্তেজিত বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয় র্যাফ। সরানোর সময় বাসিন্দাদের সঙ্গে র্যাফের ধাক্কাধাক্কি হয়। কিছুটা বলপ্রয়োগ করে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয় র্যাফ। এরপর পুলিস ও র্যাফের উপস্থিতিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, আদালতে নানা গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রয়েছে। আদালতের সুরক্ষার জন্য অরক্ষিত জায়গায় পাঁচিল দেওয়া জরুরি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গা দিয়ে যাতায়াত করছেন। সেখানে পাঁচিল তোলা হলে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হবে। ঘরে যাতায়াতে সমস্যা হবে। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত ছিল।