Breaking News

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে বিজেপি সমর্থকের রহস্যজনক মৃত্যু, খুন করা হয়েছে দাবী বিজেপির

Tensions about the mysterious death of the BJP supporter. Berugram, Khandaghosh

খন্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার বেড়ুগ্রামে শুক্রবার রাতে এক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে উঠল। মৃত ব্যক্তির নাম গোপাল পাল (৬০)। বাড়ি খন্ডঘোষ ব্লকের বেড়ুগ্রামের দক্ষিণপাড়ায়। শাসপুরবর্ধমান রুটের বেড়ুগ্রামের বহড়াগড়িয়া দিঘীরপাড় এলাকায় তাঁর একটি চা ও মিষ্টির দোকান রয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁর দোকানের সামনেই তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় মানুষজন। মৃতের কাঁধে গামছা ছিল। তবে শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরিবারের মধ্যেই চুড়ান্ত ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমানদোকান বন্ধ করার সময় অসাবধানতাবশততাঁর দোকানের দরজায় শক্ খেয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। মনে করা হচ্ছে দোকানের দরজা কোনো কারণে বিদ্যুতবাহি হয়ে থাকার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ বিদ্যুত দপ্তরকে বিষয়টি অনুসন্ধান করার কথা জানিয়েছে। যদিও বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর তত্ত্ব মানতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। Tensions about the mysterious death of the BJP supporter. Berugram, Khandaghosh সৌমিত্র খাঁ জানিয়েছেনকোথা থেকে বিদ্যুতের তার এলএতদিন কিছু হল না – শুক্রবার রাতেই আচমকা বিদ্যুতের তারে শক খেয়ে গোপালবাবু মারা গেলেন – গল্প সাজানো হচ্ছে। তাঁরা এসব মানছেন নাতাঁরা গোটা ঘটনার ফরেনসিক তদন্তেরই দাবী জানাচ্ছেন। যদিও মৃতের ছেলে ও মেয়ে উভয়েই জানিয়েছেনমৃতের ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত হতে চাইছেন। অপরদিকেবিজেপির দাবীগোপালবাবুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আর বিজেপির এই দাবীকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছেগোটা এলাকায়। শনিবার সকাল থেকেই গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা থাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়েই বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ সস্ত্রীক ছুটে আসেন বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশ মর্গে। এই ঘটনায় তিনি ফরেনসিক তদন্তেরও দাবী করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেনতৃণমূল খুনের রাজনীতি করছে। বিজেপি চুপ করে বসে থাকবে না। রাজনৈতিকভাবেই এব্যাপারে মোকাবিলা করা হবে। MP Saumitra Khan - Tensions about the mysterious death of the BJP supporter. Berugram, Khandaghosh বহড়াগ্রামের বিজেপি নেতা সেখ মোজাম্মেলখোন্দেকার আকবরমীর নজরুল ইসলামআশীষ হাটি প্রমুখরা এদিন জানিয়েছেনগত লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত গোটা এলাকায় তৃণমূলের দাপট ছিল। এমনকি লোকসভা ভোটেও বহু মানুষকে তৃণমূল ভোট দিতে দেয়নি। ভোট গণনার দিনও ব্যাপক শাসানি দিতে থাকে তারা। এদিকেফলাফল প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূল নেতারা চুপ হয়ে যান। তাঁরা জানিয়েছেনবহড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিয়র রহমান মল্লিক ওরফে বুলু নামে এক ব্যক্তি গত ৩দিন ধরে আচমকাই চমকাতে থাকেন। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে থাকেন। বুলু কিছুদিন আগে পর্যন্ত মুম্বাইয়ে থাকলেও সম্প্রতি কলকাতায় থাকেন। তিনিকি করেন গ্রামবাসীরা তা জানাতে পারেননি। বুলুর দাদা বহড়া গ্রামের তৃণমূলের নেতাও। বিজেপির অভিযোগশুক্রবার গ্রামে বিজেপি পতাকা খুলে ফেলে দিয়ে সেখানে সিপিএমের পতাকা লাগিয়ে দেয় তৃণমূল। এই ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এব্যাপারে খণ্ডঘোষ থানায় দফায় দফায় অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ কোনো অভিযোগ নেয়নি। এরই মাঝে শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যাপক বোমাবাজি করে বুলু। ফলে সন্ধ্যে থেকেই বাজার এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনায় বিজেপি সমর্থকরা একজোট হয়ে তাড়া করে বুলু ও তার দলবলকে। তারা পালিয়ে যায়। এরপরই গ্রামে ঢোকে ভিলেজ পুলিশ। গ্রামবাসীদের অভিযোগবহড়া গ্রামের এক ভিলেজ পুলিশ গ্রামের সমস্ত খবরাখবর তৃণমূল নেতাদের দিলেও গ্রামের চলতে থাকা অশান্তির বিষয়ে পুলিশকে কোনো খবর দেয়নি। এই ঘটনায় ওই ভিলেজ পুলিশকে গ্রামবা্সীরা আটকেও রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ এলে তাঁদেরও আটকে রেখে বুলু সহ কয়েকজন অশান্তি সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানান। পরে পুলিশ আশ্বাস দিলে তাঁদের ঘেরাও মুক্ত করেন গ্রামবাসীরা। Tensions about the mysterious death of the BJP supporter. Berugram, Khandaghosh গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছেশুক্রবার রাতে বাজারের অন্যান্য দোকান বন্ধ হয়ে গেলেওগোপালবাবু নিজের দোকানেই সম্ভবত কোনো অর্ডার থাকায় মিষ্টি তৈরী করছিলেন। রাত্রি প্রায় ১০টা নাগাদ তিনি দোকান বন্ধ করার সময় আচমকাই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। কেউ কেউ বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বললেও বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁএর দাবীসম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবেই গোপালবাবুকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এদিকেএই ঘটনার পরই উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ রাতেই মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। শনিবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়। অন্যদিকেখবর পেয়ে মর্গে ছুটে আসেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁবিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীজেলা নেতা আইনুল হকগোলাম জার্জিস প্রমুখরাও। এদিকেএই গোপালবাবুর অস্বাভাবিকমৃত্যুকে বিজেপি খুন বলে দাবী করলেও মৃতের ছেলে সঞ্জয় পাল এবং মেয়ে সাধনা পাল জানিয়েছেনতাঁর বাবা সরাসরি রাজনীতি করতেন না। এমনকি গোপালবাবুকে খুন করা হয়েছে বলেও তাঁরা বলতে পারেননি। সাধনা পাল জানিয়েছেনময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁরা বুঝতে পারছেন না কিভাবে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকেছেলে সঞ্জয় পাল জানিয়েছেনযেহেতু তিনি নিজে দেখেননি বা কেউই দেখেননি কিভাবে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে তাই খুন না অন্যকিছু তা তিনিও বলতে পারছেন না। অন্যদিকেএব্যাপারে খণ্ডঘোষের তৃণমূল ব্লক সভাপতি অপার্থিইসলাম জানিয়েছেনএকজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে দোকানের মধ্যেই। কিভাবে মৃত্যু হল পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকেএদিন দুপুরে মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বর্ধমানআরামবাগ রুটের বাদুলিয়া মোড়ে মিনিট দশেক মৃতদেহ নামিয়ে রেখে প্রতীকি বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। এই সময় বিজেপি সাংসদ খণ্ডঘোষ থানার ওসি সম্পর্কে কটু মন্তব্য করায় পুলিশ মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ সাংসদের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে। উল্লেখ্যলোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে না পারায় সৌমিত্রবাবুকে তাঁর নির্বাচনী প্রচার খণ্ডঘোষ ব্লকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছিল। এমনকি খণ্ডঘোষে দফায় দফায় পুলিশের সামনেই তৃণমূল সমর্থকরা তাঁকে হেনস্থাও করেন। এব্যাপারে খণ্ডঘোষ থানার ওসি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি তখনও রীতিমত ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। বাদুলিয়ায় বিক্ষোভ দেখানোরপরে গ্রামের উদ্দেশ্যে মৃতদেহ নিয়ে রওনা হন বিজেপি নেতৃত্ব। অন্যদিকে,এই ঘটনায় বহড়া গ্রামে শনিবার ব্যাপক চাপা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গোটা এলাকা কার্যত শুনশান। বাজার দোকানও বন্ধ। এমনকি গ্রামের প্রাথমিক স্কুল খুললেও শিক্ষকরা হাজিরা দিলেও মেলেনি ছাত্রছাত্রী।

About admin

Check Also

Doctor Birupaksha Biswas was transferred to Kakdwip a year ago, did not go

এক বছর আগেই কাকদ্বীপে বদলি করা হয় চিকিৎসক বিরূপাক্ষকে, যাননি; ক্যান্টিন মালিক আইনের পথে

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিতর্কিত চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে এক বছর আগেই স্বাস্থ্য দপ্তর বদলির নির্দেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *