গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম না মেটানোয় পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দিল আদালত। বর্ধমান শহরের সাধনপুর এলাকায় বাগান, ফাঁকা জমি ও ভবন-সহ পুরো বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ কার্যকর করার জন্য জেলা আদালতের নাজিরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন বিচারক। ক্রোকের পর বাংলোটি যাতে নিলামে বিক্রি করা যায় তার জন্য বাজারদর জানতে নাজিরকে বলা হয়েছে। ক্রোক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে কতজন পুলিস প্রয়োজন হবে তারও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে নাজিরকে। ১৯ জুলাই এ ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে নাজিরকে। বাংলো নিলাম করে জমির মূল্য বাবদ আদালত নির্ধারিত টাকা মিটবে কিনা তাও জানাতে বলা হয়েছে নির্দেশ। শুক্রবার বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ এই নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই নির্দেশ চাউর হওয়ার পর জেলার প্রশাসন মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ধমানের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) মুরারি মোহন কুমার বলেন, সরকারের তরফে হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন করার কথা বলে সময় চাওয়া হয়। এনিয়ে দু’পক্ষের শুনানি হয়। তবে, আদালত কী নির্দেশ দিয়েছে তা না দেখে বলতে পারব না।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক ফোর-লেন করার জন্য ২০০৩ সালে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পশ্চিম বর্ধমানের কাঠপুকুর মৌজায় কলকাতার সরশুনা থানার হো-চি-মিন সরণির বাসিন্দা সুশান্ত কুমার গোস্বামীর ০.৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। জমির মূল্য স্থির হয় ২৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা। যদিও সরকার সেই টাকা মেটায় নি। এনিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেন জমির মালিক। যদিও তাতে কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে জমির মূল্য বাবদ নির্ধারিত টাকা পেতে তিনি ২০১৩ সালে মামলা করেন বর্ধমান আদালতে। আদালত জমির মূল্য বাবদ ৫৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। যদিও আদালতের নির্দেশের পরও সরকার জমির মালিককে জমির মূল্য বাবদ প্রাপ্য টাকা মেটায়নি। নির্দেশ কার্যকর করতে ২০১৫ সালে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন জমির মালিক। সেই থেকে মামলাটি বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে চলছিল। এরই মধ্যে জমির মালিক মারা গেলে তিন ওয়ারিশ মিতালি গোস্বামী, পার্থসারথি গোস্বামী ও সিদ্ধার্থ গোস্বামী মামলাটি চালিয়ে যান। এ বছরের ১২ এপ্রিল আদালত জমির মূল্য বাবদ মালিককে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯০ টাকা ১৭ মে এর মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশও মানেনি সরকার। এদিনের শুনানির শুরুতে জিপি ১২ এপ্রিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার জন্য আরও ২ মাস সময় চান। সিদ্ধার্থ আইনজীবী হওয়ায় তিনি নিজেই সওয়াল করেন। সরকার পক্ষের সময় চাওয়া নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি করেন। দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আগেরদিনের শুনানিতেই আর কোনও সময় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রায় কার্যকর করা নিয়ে সময় দিলে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবে। সরকার পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে ৩.০৪ একর জমির উপর তৈরি জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দেন বিচারক। সিদ্ধার্থ বলেন, আমি নিজেই আইনজীবী। সরকার দীর্ঘদিন ধরে নানা অছিলায় জমির দাম মেটাচ্ছিল না। আমি আইন জানি বলে কীভাবে রায় কার্যকর করতে হয় তা জানা আছে। আইনজীবীর যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।
Tags Bardhaman Purba Bardhaman Purba Bardhaman district magistrate Purba Burdwan
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …