গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ৯ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের দায়ে যুবককে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দিল বর্ধমানের পকসো আদালত। এছাড়াও সাজাপ্রাপ্তকে ১০ হাজার টাকা আির্থক জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে আরও ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা মৃতার পরিবারকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বর্ধমানের পকসো আদালতের বিচারক শনিবার এই সাজা শুনিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্তের নাম অশোক তুড়ি। বর্ধমান শহরের পারবীরহাটার নতুন কলোনিতে তার বাড়ি। সাজা ঘোষণার আগে বিচারক তার বক্তব্য শুনতে চান। অশোক বলে, তার বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। স্ত্রী ছাড়াও ১০ ও ৭ বছরের দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। মূলতঃ তার রোজগারেই সংসার চলত। ঘটনার পর তার পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। কম শাস্তি যাতে দেওয়া হয় সেই আির্জ বিচারকের কাছে জানায় অশোক। যদিও তাতে আমল দেননি বিচারক।
পুলিস জানিয়েছে, বর্ধমান শহরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসীপাড়ায় ওই নাবালিকার বাড়ি। ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নাবালিকার মা দুই মেয়েকে নিয়ে শহরের ভাতছালার পিওনপাড়ায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। মেয়েটি তার দাদুর কাছে ছিল। প্রতিবেশী অশোক তাকে ২০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাঁকার পাড়ে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে সে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করার জন্য শ্বাসরোধ করে সে নাবালিকাকে খুন করে। বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে খুঁজতে বের হন নাবালিকার মা। সেই সময় অশোককে বাঁকার পাড় ধরে পালিয়ে যেতে দেখেন তাঁরা। তাড়া করে প্রতিবেশীরা অশোককে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেন। ঘটনাস্থল থেকে ২০ টাকা, রক্তমাখা একটি চটি ও মেয়েটির একটি চটি উদ্ধার হয়। ঘটনার দিনই নাবালিকার মা বর্ধমান মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে ধর্ষণ, খুন ও পকসো অ্যাক্টের ৪ ও ৬ ধারায় মামলা রুজু করে থানা।
তদন্ত সম্পূর্ণ করে ঘটনার ২০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করে পুলিস। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। মৃতার ভিসেরা ও যোনিরস কলকাতার বেলগাছিয়ায় ফরেন্সিক স্টেট ল্যাবরেটারিতে পাঠানো হয়। যদিও রায় ঘোষণার দিনও সেই রিপোর্ট আদালতে পেশ হয়নি। মামলাটি শহরে সাড়া ফেলে দেয়। সরকার মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দু’জন সরকারি আইনজীবীকে নিয়োগ করে। পকসো আদালতের স্পেশাল পিপি গৌতম মুখোপাধ্যায় ছাড়াও শিবরাম ঘোষালকে সরকারি আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এদিন আদালত চত্বরে আদিবাসীপাড়ার বহু বাসিন্দা হাজির হয়েছিলেন। হাজির ছিলেন নাবালিকার মা। রায় ঘোষণার পর নাবালিকার মা বলেন, চেয়েছিলাম অশোকের ফাঁসি হোক। আমার মেয়েটার উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে সে খুন করেছে। এখন সারাজীবন জেলে পচুক। আর আমার মেয়ের উপর অত্যাচারের কথা ভাবুক। সাজাপ্রাপ্ত বলে, আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। তবে, উচ্চ আদালতে যাওয়ার মত আির্থক সামর্থ্য আমার নেই। আশা করি, সরকার আমার মামলা লড়ার ব্যবস্থা করবে।
Tags rape and murder
Check Also
বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার যুবতী, গ্রেপ্তার ৫
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধুর সঙ্গে পিৎজা খেতে বের হয়ে ধর্ষণের শিকার হলেন এক যুবতী। …