বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা রাজ্য জুড়েই জেলায় জেলায় মাঝে মাঝেই যখন মিড ডে মিল নিয়ে নানান অভিযোগে সরব হন পড়ুয়া থেকে অভিভাবককুল, সেই সময় সম্ভবত গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম নজীর গড়ল বর্ধমান শহরের শ্রী রামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়। বুধবার থেকে এই স্কুলে চালু হল ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাতরাশ বা ব্রেকফাষ্ট। যার শ্লোগান রাখা হয়েছে “সকালের পুষ্টি, সকলের পুষ্টি”। এদিন এই কর্মসূচীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রধান পরেশ সরকার, ডিআই (প্রাথমিক)-সহ অন্যান্যরা। স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার দেওয়া হবে ব্রেড বাটার ও ডিম সেদ্ধ, মঙ্গলবার দেওয়া হবে হরলিক্স ও বিস্কুট, বুধবার দেওয়া হবে ব্রেড জ্যাম ও কলা, বৃহস্পতিবার দেওয়া হবে দুধ ও কর্নফ্লেক্স অথবা চকোস, শুক্রবার দেওয়া হবে ব্রেড ও ডিমসেদ্ধ এবং শনিবার দেওয়া হবে কমপ্ল্যান ও বিস্কুট। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা এই কর্মসূচীর মূল উদ্যোক্তা ২০২২ সালের রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন পুরষ্কার প্রাপক পলাশ চৌধুরী জানিয়েছেন, সকালে বাচ্চারা স্কুলে খেয়ে আসেনা, এটা আমরা দেখছি। সরকারের মিড-ডে মিল প্রকল্প আছে, সেটা চলে সকাল ১০ টায়। স্কুল শুরুর সময় প্রার্থনার লাইনে অনেক বাচ্চাকে বমি করতে দেখি, বা মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে বলে জানতে পারি। আমরা জানতে পেরেছি, অধিকাংশ বাচ্চা সকালে কিছু না খেয়ে স্কুলে আসে। আর যারা খেয়ে আসে তারাও খুব সামান্য কিছুই খেয়ে আসে। আর এক শ্রেণীর বাচ্চা আছে যারা টিফিন নিয়ে আসে, কিন্তু সেটা অস্বাস্থ্যকর। যেমন কেক, ম্যাগি, চাউমিন। এটা ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ টিফিন আনে না। আগেরদিন রাতে খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকে। এটা সকালের স্কুল, এখানে সকাল ১০ টায় মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। পলাশ চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর এক সহকর্মী এবং এক চিকিৎসক বন্ধুর সাথে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এবং তাঁরা ৩ জন মিলে প্রাথমিকভাবে ৬ মাসের একটা প্রোজেক্ট তৈরী করেছেন। তাঁরা ৩ জন ব্যক্তিগত উদ্যোগে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেবেন প্রাতঃরাশ। প্রতি সপ্তাহের ৬ দিনে থাকবে ৬ রকম মেনু। প্রতিদিন জন প্রতি ১০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। মাসে ২৮-৩০ হাজার টাকা, বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ছাত্রছাত্রীরাই খাবার পরিবেশন করবে। ৫০ শতাংশ টাকা সহ-শিক্ষিকা লাবণ্য রায় দেবেন। পলাশ চৌধুরী এবং তাঁর চিকিৎসক বন্ধু রাসবিহারী ধনী ২৫ শতাংশ করে অর্থ দেবেন। এই প্রাতঃরাশের জন্য ১৫ মিনিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্কুলের টিফিন টাইম ৮ টা থেকে ৮ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। সেখান থেকে ১০ মিনিট নেওয়া হবে, আর স্কুল ছুটির সময় ৫ মিনিট পিছিয়ে সেখান থেকে ৫ মিনিট নেওয়া হবে। মাসে চার হাজার টাকা দিয়ে একজন কর্মীও রাখা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, জেলাশাসক, সংসদের চেয়ারম্যান সবাইকে এই কর্মসূচী সম্পর্কে জানিয়েছেন। প্রি-প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে প্রায় ২০০ জন পড়ুয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ চৌধুরী। শিক্ষিকা লাবণ্য রায় জানিয়েছেন, তাঁরা অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছেন বেশীরভাগ বাচ্চারা স্কুলে খেয়ে আসেনা। হতে পারে সময়ের অভাব, আবার অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। প্রার্থনার লাইনে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পরে। ক্লাস শুরু হলে খিদে পায় বলে ওরা জানায়। বাড়িতে রাত ১০ টায় খাবার পর পরের দিন সকাল ১০ টায় মিড-ডে মিল পাচ্ছে, প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্যবধান থাকছে। টিফিন টাইমে যা খাচ্ছে সেটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সেখান থেকেই তাঁরা প্রাতঃরাশ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের যতদিন চাকরি আছে ততদিনই এই স্কুলে তাঁদের উদ্যোগে এই প্রাতঃরাশ দেওয়া চালু থাকবে।