E Purba Bardhaman

মাঠে নেমেই এলোপাথাড়ি ব্যাট ঘোরাতে গিয়ে বিপত্তির মুখে দিলীপ ঘোষ, তৃণমূলের গো-ব্যাক স্লোগান

The Trinamool Congress has complained to the Election Commission against Dilip Ghosh for making bad comments about Mamata Banerjee.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- নির্বাচনী পিচে ব্যাট হাতে নেমে এলোপাথাড়ি বল হাঁকাতে গিয়ে আম্পায়ারের কোপের মুখে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায় প্রাত:ভ্রমণের পরে সাংবাদিকদের কাছে দিলীপ ঘোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করে বসলেন, “দিদি ভাইপোকে চায়। দিদির পা টলছে, বাড়ির লোক দিদিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে। এবার বাংলায় লোক কখন ধাক্কা মারবে উনি বুঝতেই পারবেন না। দিদি গোয়াতে গিয়ে বলেন আমি গোয়ার মেয়ে, ত্রিপুরায় গিয়ে বলেন আমি ত্রিপুরার মেয়ে। বাপ তো ঠিক করুন। যার তার মেয়ে হওয়া ঠিক নয়।” আর দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যকে ঘিরেই শুরু হয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে তোলপাড়। তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে নালিশ জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসকের কাছে এব্যাপারে এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, এ ব্যাপারে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কীর্তি আজাদ জানিয়েছেন, “দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপির মানসিকতা প্রতিদিনই সবার সামনে আসছে, কারণ তাঁরা নিয়মিত নারীবিরোধী মন্তব্য করছেন। এর আগে, দিলীপ ঘোষ মা দুর্গার বংশ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন এবং এখন তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন। এটা শুধু তাঁদের নারীবিরোধী মানসিকতাই প্রকাশ্যে নিয়ে আসে না, বরং তাঁরা যে জমিদার, সেটাও স্পষ্ট করে। যেহেতু নারীদের প্রতি তাঁদের কোনও সম্মান নেই, তাই তাঁরা যা খুশি তাই বলে। আমি বুঝতে পারছি না, এদের পাশে মানুষ কীভাবে থাকবে, যাদের নারী কিংবা দেবীদের প্রতি সম্মান নেই। মানুষের এই বিজেপি নেতাদের ত্যাগ করা উচিত”। উল্লেখ্য, দীর্ঘ টালবাহানার পর রবিবার রাতে দিলীপবাবুর নাম ঘোষণার পর সোমবার সকালেই তিনি চলে আসেন বর্ধমানে। সাংবাদিকদের তিনি জানান, তাঁর কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে। এমনকি তাঁর প্রতিপক্ষ ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য অলরাউন্ডার কীর্তি আজাদ সম্পর্কে দিলীপবাবুর স্বভাবসিদ্ধ উক্তি ‘তিনি বোলার দেখেন না, তিনি বল দেখেন’। তিনি জানিয়েছেন, তিনি যখন এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন তখনই তৃণমূলকে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বস্তুত, তাঁর সেই বক্তব্যের পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এই মন্তব্য নিয়ে ঘোর অস্বস্তিতে পদ্ম শিবির। এদিকে, সোমবার এবং মঙ্গলবার দুদিনই তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা চুটিয়ে প্রচার করলেন। খেললেন রং। বাজালেন খোল করতাল। চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থী চা তৈরি করলেন। কুড়মুনে প্রচারের ফাঁকে সিঙ্গাড়া ভাজলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের সদস্য কীর্তি আজাদ। শুধু সিঙ্গাড়া ভাজাই নয়, চা ঢেলে কাপে কাপে ঢেলে তা পরিবেশনও করলেন তিনি। অন্যদিকে, বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরিন্দরজিত সিং অহলুবালিয়াকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ও ক্ষোভ সম্পর্কে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই উনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁর রিপোর্ট কার্ড দেখাবেন। তিনি বলেন, বর্ধমান-দুর্গাপুরও আমার চেনা মাঠ। এখানে আমি গ্রামে গ্রামে গেছি, প্রত্যেকটা এলাকা আমি চিনি। লোকেও আমাকে চেনেন, আমি যদি গ্রামে হাঁটি লোক ডেকে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন দিলীপবাবু কেমন আছেন। আমি গ্রামে হাঁটবো, সকালবেলা উঠে গ্রামে চা খেতে বেরোবো, আমি ভাষণ দেওয়ার লোক নই। এদিকে, এই আবহের মাঝেই মঙ্গলবার বর্ধমান পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে জনসংযোগ করতে গিয়ে দিলীপ ঘোষকে গো ব্যাক স্লোগান দিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শিবশঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে এই স্লোগানকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। The Trinamool Congress has complained to the Election Commission against Dilip Ghosh for making bad comments about Mamata Banerjee. এদিন সকালে আম বাগান এলাকায় আবির মেখে, মিষ্টিমুখ করে জনসংযোগ করছিলেন দিলীপ ঘোষ। অনুষ্ঠান শেষে তৃণমূলের কয়েকজন আমবাগান দুর্গামণ্ডপ এলাকায় বসেছিলেন। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শিবশঙ্কর ঘোষ-সহ কয়েকজন দোল খেলছিলেন। তখনই সৌজন্য দেখাতে যান দিলীপবাবু। তাঁকে দেখে শিবু বলেন, “আপনার তো সাজানো বাগান। আপনি চষে এলেন, অন্যজন চাষ করছে।” উত্তরে দিলীপবাবু বলেন, আমরা তো চাষা, বর্ধমানে আপনারাও চাষা, আমাদের কাজই আশায় বাঁচা। এর পরেই একজন বলে ওঠেন, “দাদা চলে এসেছে, তৃণমূল কাঁপছে।” তারপরই দেখা দেয় উত্তেজনা। বিক্ষোভ শুরু হয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গো-ব্যাক স্লোগান। শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‍্যাফ দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। দিলীপবাবু এব্যাপারে বলেন, সৌজন্য তো দেখাচ্ছিলাম। ওরা বিতর্ক করছে। এদিন বর্ধমানে জনসংযোগ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের দিলীপবাবু জানান, গোটা পশ্চিমবাংলায় অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে ভোট লুট করিয়েছে আমি জানি। আমাদের কাছে সেই রেকর্ড আছে। কে কী করেছে। শুধরে না গেলে আমরা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করব। বাড়িতে বসে টিভিতে নির্বাচন দেখতে হবে। সেটা যাতে না হয় পুলিশ অফিসারেরা তাঁদের ডিউটি পালন করুক। আর এটাও মনে রাখুক কোনও সরকার কোনও দিন স্থায়ী হয় না। লালু, মুলায়ম দাপট দেখছি। খুঁটির জোড়ে যে ভেড়া লড়ে সে ভেড়া বেশি দিন লড়তে পারে না।

Exit mobile version