মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক জনসংযোগ কর্মসূচীও নিয়েছে। তারই সঙ্গে গোটা দলের খোলনলচে বদলেও ফেলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোটা রাজ্যের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি থেকে একেবারে অঞ্চল কমিটি এবং পুর এলাকায় ওয়ার্ড কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই কমিটি ঘোষণা করার পরই শুরু হয়েছে তৃণমূলের তীব্র গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি বর্ধমান ২ ব্লকের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেই কমিটিতে নাম রয়েছে বর্ধমান উত্তর বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নিশীথ মালিকের ভাই শান্তনু মালিকের। সম্প্রতি এই শান্তনু মালিকের নাম স্কুলের চাকরীতে গ্রুপ ডি-র বিতর্কিত তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ শুরু হয়েছে। সেই শান্তনু মালিকের নাম বর্ধমান ২ ব্লক কমিটিতে থাকায় নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যদিও এব্যাপারে কেউই মুখ খুলতে রাজী হননি। এদিকে, এই কমিটি ঘোষণা নিয়ে যখন জায়গায় জায়গায় তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়ছে সেই সময় রীতিমত দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠল মেমারীতে। মেমারী পুরসভার ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণার পরই এতদিন যা ছিলো তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় রাতারাতি তা বদলে হয়ে গেল কাউন্সিলার কার্যালয়। নজিরবিহীন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মেমারী শহর জুড়ে। জানা গেছে, মেমারী পৌরসভার ১, ১২ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় গুলির দেওয়ালে ‘তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’ লেখাটি রাতারাতি মুছে দিয়ে নতুন করে ‘কাউন্সিলার কার্যালয়’ লেখা হয়েছে। একে ঘিরেই মেমারী পৌর এলাকা তথা মেমারী শহরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার স্বপন বিষয়ী যেহেতু নিজেই মেমারী পৌরসভার চেয়ারম্যান তাই এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে। মেমারী শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন ঘোষালের অভিযোগ, গত ২ দিন আগেই দলের তরফে মেমারী শহরের ১৬ টি ওয়ার্ডের সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরই বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় থেকে ‘তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’ লেখাটি মুছে দিয়ে সেখানে ‘কাউন্সিলার কার্যালয়’ বলে লিখে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, গত ১০ বছর ধরে এই সমস্ত ওয়ার্ডে মেমারী পৌরসভার চেয়ারম্যানের অনুগামীরাই ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তারা এই অফিসগুলি থেকেই দলীয় কাজ পরিচালনা করতেন। এখন ‘নতুন তৃণমূলে’র সভাপতি হওয়ায় যদি তারা এই অফিসগুলিতে বসে তাহলে তাদের মানুষ আর মানবে না বলে সেই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় মুছে ফেলছে। স্বপন ঘোষাল জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কাউন্সিলাররাই যে দেওয়াল মুছে নতুন করে দেওয়াল লিখতে বলেছেন একথা স্বীকার করে নিয়েছেন রঙতুলি শিল্পীরাও। অপরদিকে, ওয়ার্ড অফিস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় মুছে ফেলা নিয়ে সরব হয়েছেন নবনিযুক্ত ওয়ার্ড সভাপতিরাও। যদিও এব্যাপারে পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী’র কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তাপস কুমার পাঁজা ও ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কাসমিরা খাতুন সেখ জানিয়েছেন, অফিসের ডেকরেশন করা হচ্ছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁরা গত পৌরভোটে বিজেপি ও সিপিএমের হয়ে ভোট করিয়েছেন। নতুন কমিটি নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। ইর্ষা থেকেই হয়ত কেউ বা কারা এই অভিযোগ করছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। বিজেপি বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান, এটা নতুন কিছু নয়। তোলা কে তুলবে এটাই আসল। তাই সেখানে দল নয়, আদর্শ নয় -এলাকাকে দখল রাখা টাই আসল। তাই এই লড়াই। আসলে মেমারীর চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী বনাম শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন ঘোষালের লড়াইয়ের ফল এটা।
Tags party office Trinamool Trinamool Congress Trinamool's factional conflict
Check Also
এক বছর আগেই কাকদ্বীপে বদলি করা হয় চিকিৎসক বিরূপাক্ষকে, যাননি; ক্যান্টিন মালিক আইনের পথে
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিতর্কিত চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে এক বছর আগেই স্বাস্থ্য দপ্তর বদলির নির্দেশ …