গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পরিদর্শনে এসে পকসো আদালতের পরিকাঠামোর বিষয়ে বিশেষভাবে খোঁজখবর নিলেন হাইকোর্টের দুই বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। পকসো আদালতের বিষয়ে কিছু পরামর্শও দেন তারা। পকসো আদালতে নির্যাতিতারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে তা দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন দুই বিচারপতি। পাশাপাশি আদালত চত্বরে আইনজীবীদের বসার ঘর তৈরি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা খুব শীঘ্রই নিরসন করা হবে বলে বিচারপতিরা আশ্বস্ত করেছেন বলে বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি। আদালত সংলগ্ন শিমূল পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে অরক্ষিত জায়গা নিয়েও জেলাশাসক ও পুলিস সুপারকে ব্যবস্থা নিতে তারা নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিচারপতিদের পরিদর্শন চলাকালীন বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল তথা স্থানীয় কাউন্সিলার শিখা দত্ত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে শতিনেক মানুষ আদালত চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আইনজীবীদের বসার জায়গা বেআইনিভাবে তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও তাতে বিন্দুমাত্র আমল দেননি দুই বিচারপতি। এমনকি চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দিতে গেলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি। বিচারপতিদের পরিদর্শন চলাকালীন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখানো যায় না বলে মত আইন বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার বেলা ১১টা ১৫ নাগাদ দুই বিচারপতি এবং আইন দপ্তরের সচিব বিবেক চৌধুরি আদালতে হাজির হন। জেলা জজ তাদের সম্বর্ধনা জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা জজের চেম্বারে বিচার বিভাগের সচিব, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উদয় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক সদন তা, সহ-সভাপতি তিতাস চৌধুরির সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই বিচারপতি। জেলা জজ কেশাং ডোমা ভুটিয়াও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলাকালীন বারের তরফে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা না থাকার বিষয়টি বিচারপতিদের নজরে আনা হয়। আইনজীবীদের বসার ঘর তৈরি নিয়ে যে অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে তা দূর করার আবেদন জানানো হয় বারের তরফে। জেলাশাসক ও বিচার সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুই বিচারপতি বারের প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেছেন বলে বারের দাবি। বৈঠক চলাকালীন পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল লোকজন নিয়ে জেলা জজের কক্ষের দিকে যেতে চান। পুলিস তাঁদের আটকায়। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সঙ্গে আসা লোকজনকে দোতলা থেকে নামিয়ে দেয় পুলিস। ঘন্টা খানেক বৈঠকের পর দুই বিচারপতি জেলা জজ ও বিচার সচিবকে নিয়ে আদালত চত্বর ঘুরে দেখেন। নির্মীয়মান ঘরগুলিও তারা দেখেন। শিমূল পুকুরের দক্ষিণ দিকে গিয়ে অরক্ষিত জায়গাটি ঘুরে দেখেন তারা। সেখান থেকে বিচারপতিরা ফের জেলা জজের চেম্বারে যান। সেখানে কিছুক্ষণ জেলাশাসক ও পুলিস সুপারের সঙ্গে আলোচনা করেন তারা।
প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সভা সেরে দুই বিচারপতি আদালতের ৪ তলায় পৃথক পকসো আদালতের কক্ষ পরিদর্শন করেন। সেখানে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের লোকজনের বসার জায়গা ঘুরে দেখেন তারা। আদালত কক্ষটিও ঘুরে দেখেন তারা। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের পকসো আদালত কক্ষ বাচ্চাদের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ দেন। টয়লেটটিও বাচ্চাদের মতো করে তৈরি করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। নির্যাতিতাদের বসার পৃথক ঘরে ছোটা ভীম ও মাইটিরাজুর ছবি রাখার জন্য পরামর্শ দেন বিচারপতি। এছাড়াও পকসো আদালতের শুনানি কিভাবে ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থায় চালানো হবে সে ব্যাপারেও জেলা জজের কাছে খোঁজ নেন বিচারপতিরা। আদালতের পুরানো ভবন থেকে নতুন ভবনে যাতায়াতের জন্য ঝোলা বারান্দা তৈরি, লিফট বসানোর পরিকল্পনার বিষয়ে জেলা জজের কাছ থেকে খোঁজখবর নেন বিচারপতিরা। পরে বিচারপতিরা আদালতের বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরিদর্শনে বিচারপতিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা জজের কাজকর্মেরও বিচারপতিরা প্রশংসা করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিদর্শন সেরে বিচারপতিরা সার্কিট হাউসে যান। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ সেরে তারা গাড়িতে দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে রাতে থাকবেন তারা। রবিবার দুর্গাপুর আদালত ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যর সঙ্গে তারাও উপস্থিত থাকবেন। শিখা দেবী বলেন, আইনজীবীরা আইন ভেঙে ঘর তৈরি করছেন। পুরসভার তরফে কাজ বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। তবে, কি বিষয়ে বিচারপতিদের তিনি স্মারকলিপি দিতে এসেছিলেন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি তিনি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শহরে বহু বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু, সেসব নির্মাণের ব্যাপারে পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুই বিচারপতির কাছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সমস্যাগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে বিচারপতিরা আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে বিচারপতিরা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরই এদিন বিকালে পূর্ত দপ্তরের একটি দল আদালত চত্বর পরিদর্শনে আসে। নির্মাণের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি আদালত চত্বরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার রূপরেখা তৈরি করতে পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের এই পরিদর্শন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।