রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বাংলা চলচ্চিত্র জগতের মহানায়ক উত্তমকুমারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই দিনটিকে নানান অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালন করার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে উত্তম কুমারের অবদান নিয়ে যখন একদিকে আলোচনা, স্মৃতিচারণা – তখন অন্যদিকে, উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত নতু গ্রাম অন্যভাবে স্মৃতি রোমন্থন করে। সময়টা ছিল ইংরাজীর ১৯৫৮-এর জুলাই মাস। একটা ফিয়েটে গাড়িতে চড়ে উত্তম কুমার স্ত্রী গৌরীদেবীকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের নতু গ্রামের জমিদার মুখার্জ্জী বাড়িতে এসেছিলেন। আজও সেই দিনটিকে স্মরণে রেখেছেন গ্রামের বর্ষীয়ান মানুষ একসময়ের সখের যাত্রাপালায় অভিনেতা সেখ আনসার আলি। জানিয়েছেন, ঠিক এই বর্ষার সময় দামোদরের বাঁধ সংলগ্ন এলাকার জমিদার মুখার্জী বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে যিনি নামলেন – তা দেখেই চমকে উঠেছিলেন গ্রামের মানুষ। স্বপ্নের মানুষ তাঁদের সামনে। উত্তম কুমার। সঙ্গে স্ত্রী গৌরীদেবী। নতু গ্রামের এই জমিদার মুখার্জ্জী বাড়ির মেজ ছেলে কামাখ্যা মুখার্জ্জীর সঙ্গে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল উত্তম কুমারের। আর তাই বর্ষার সময় শ্যুটিং-এর ব্যস্ততা কম থাকার ফাঁকেই তিনি এসেছিলেন এই বাড়িতে। কাটিয়েছিলেন ২ রাত ৩দিন। জমিদার বাড়ির কুলপুকুরে মাথা ঘোরানো হাত জাল দিয়ে মাছ ধরাও শিখেছিলেন। নৌকায় দামোদরে বেড়াতেও গিয়েছিলেন স্ত্রী গৌরীদেবীকে নিয়ে। মুখার্জ্জীবাড়ির বর্তমান বংশধর সুবীর মুখার্জ্জী জানিয়েছেন, উত্তমকুমার যখন তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন তখন তিনি নিতান্তই ছোট। বছর তিনেক তাঁর বয়স। ফলে তাঁর কিছু মনে নেই। কিন্তু তিনি তাঁর সেজকাকা কামাখ্যা মুখাজ্জী এবং বাবা রবীন মুখার্জ্জীর কাছ থেকে উত্তম কুমার সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছেন। উত্তমবাবু খুব ভালবাসতেন নারকোল মুড়ি খেতে। দেদার আড্ডাবাজ লোক ছিলেন। সবসময়ই খোশ মেজাজে থাকতেন। যে খাটে তাঁরা শুয়েছিলেন তা এখন যত্ন করে তাঁরা রেখে দিয়েছেন। উত্তমবাবুর মৃত্যুদিন কিংবা জন্মদিন এলে তাঁদের মনে পড়ে যায় সেই পুরনো স্মৃতি। টিভিতে উত্তম কুমারের ছায়াছবি দিলে অবশ্যই তাঁরা তা দেখেন। উল্লেখ্য, এখনও মুখার্জ্জী বাড়ির দেওয়ালে উত্তমকুমারের সঙ্গে মুখার্জ্জী পরিবারের ছবি ঝুলছে। তত্কালীন ক্যামেরাম্যান সনত পরামাণিক তুলেছিলেন। সস্ত্রীক উত্তম কুমার জমিদার মুখার্জ্জী পরিবারের নিজস্ব নৌকায় দামোদরের জলে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন। ছবি তুলেছিলেন। আর সেই নৌকার মাঝি ছিলেন নকুল সাঁতরা। নকুল সাঁতরার কাছ থেকে সেদিনের গল্প শুনেছিলেন ছেলে সুদেব সাঁতরা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবার কাছ থেকে নৌকার হাল নিয়ে নিজেই নৌকা চালিয়েছিলেন উত্তম কুমার। রাত পোহালেই উত্তম কুমারের ৩৮তম মৃত্যু বার্ষিকী। কিন্তু এখনও মুখার্জ্জী বাড়ির সদস্যরা সেদিনের সেই ঘটনাকে স্মরণ করেন আবেগের টানে। আবার,অন্যদিকে যখন উত্তম কুমারের এই স্মৃতিচর্চা নতুনগ্রামে, তখন আর এক ‘উত্তম পাগল’ শরত কোনার উঠেপড়ে লেগেছেন গড় বাঙালীর আইকন উত্তম সুচিত্রার জীবনাদর্শকে তুলে ধরতে। দেবতার আসনে বসিয়ে প্রতিদিন তাঁকে পুজো করেন এই উত্তম পাগল। ইতিমধ্যেই গড়ে তুলেছেন বর্ধমানে উত্তম-সুচিত্রা ফ্যান ক্লাব। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করে ফেলেছেন উত্তম-সুচিত্রার পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানোর ছাড়পত্রও। একসময় উত্তমবাবুর নেতৃত্বে তত্কালীন অভিনেতা-অভিনেত্রী, সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে উত্তম কুমার দুর্গাপুরে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেনে শিল্পী মহল। জমি কিনেছিলেন উত্তম কুমার, তরুণ কুমার, গৌরীদেবী, অঞ্জনা ভৌমিক,ভানু বন্দোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র প্রমুখরাও। শরতবাবুর অভিযোগ, সেই সমস্ত জমি অধিকাংশই বেদখল হয়ে গেছে। রাজ্য সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন এই জমি পুনরুদ্ধার করার।