রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- রায়না থানার বোরো বলরামপুরের বাতানডাঙায় ডাইন তকমা দিয়ে এক মহিলাকে মারধর করছিল শ’দেড়েক গ্রামবাসী। খবর পেয়ে রায়না-১ ব্লকের বিডিও ও পুলিস সেখানে পৌঁছায়। মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন বিডিও। মার খায় পুলিশও। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বোরো বাতানডাঙা, খণ্ডঘোষের খোরকোল, হুগলির পাণ্ডুয়া থানার বিসরা ও মেমারির বড়োয়ায় ধৃতদের বাড়ি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি বাঁশ, ১১টি লাঠি, ৪টি রড প্রভৃতি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। রায়না থানার ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের হয়ে আইনজীবী রবীন মণ্ডল ও বিশ্বজিৎ দাস (জুনিয়র) জামিন চেয়ে সওয়াল করেন। সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূঁইঞা ধৃতদের জামিনের জোরালো বিরোধিতা করেন। সওয়াল শুনে রবিবার পর্যন্ত ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের বছর একুশের মৌসুমী ক্ষেত্রপাল কিছুদিন ধরে জ্বরে ভূগছেন। এলাকাবাসীর ধারণা তার প্রতিবেশী নমিতা ক্ষেত্রপাল ডাইন। নমিতার কালাযাদুর কারসাজিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মৌসুমী। নমিতা খণ্ডঘোষের খোরকোল গ্রামের ওঝা ঝুমা মালিকের কাছ থেকে জাদু টোনা শিখে তা গ্রামে প্রয়োগ করছেন। সে কারণে মৌসুমী সহ আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মৌসুমী সহ বাকি অসুস্থদের ঝাড়ফুঁক করে শরীর থেকে ভূত নামানোর জন্য সোমবার রাতে নমিতার বাড়িতে চড়াও হয় শ’দেড়েক গ্রামবাসী। তার সঙ্গে ঝুমাকেও ডেকে আনার জন্য বলা হয় নমিতাকে। চাপে পড়ে ঝুমাকে ফোন করে ডেকে আনে নমিতা। মৌসুমীর ঝাড়ফুঁক করেন তারা। এরপর আরও কয়েকজনকে ঝাড়ফুঁক করার জন্য তাদের দুজনের উপর চাপ সৃষ্টি করে বাসিন্দারা। খবর পেয়ে রায়না-১ বিডিও এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঝাড়ফুঁক বন্ধ করার জন্য বলে পুলিশ। তাতে কর্ণপাত না করে উত্তেজিত এলাকাবাসী ঝাড়ফুঁক চালানোর জন্য দু’জনকে বলে। পুলিশ বারবার বলার পরও নমিতা ও ঝুমাকে ঝাড়ফুঁক চালানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। পুলিশ তাতে বাধা দিলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়। নমিতার বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়। উত্তেজিত জনতাকে হটাতে পুলিশ বল প্রয়োগ করে। পাল্টা রুখে দাঁড়ায় উত্তেজিত জনতা। দু’পক্ষের মধ্যে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বাধে। এরই মধ্যে উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে এসে মৌসুমীর চিকিৎসা করানো হয়। এমনকি তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়। পুলিশ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে দুই ওঝাকে মুক্ত করে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পুলিশকে আক্রমণ করে উত্তেজিত জনতা। কাস্তে, রড, লাঠি প্রভৃতি নিয়ে পুলিশের উপর হামলা হয়। তাতে সাব-ইনসপেক্টর তরুণ কুমার লেট, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কনস্টেবল শেখ মোবারক আলি, স্বপন কুমার দাস, রামপ্রসাদ দাস, হোমগার্ড রাজু মালিক, ভিলেজ পুলিস সৌরভ সাঁই ও সিভিক ভলান্টিয়ার অভিজিৎ শৰ্মা জখম হন। পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে এসডিপিও (সদর), সার্কেল ইনসপেক্টর বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ডাইন অপবাদ দিয়ে এক মহিলা ও এক ওঝাকে মারধর করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রচার চালানো হবে। এ ধরণের ঘটনা অবশ্য জেলায় এই প্রথম নয়। কয়েক মাস আগে মাধবডিহি থানা এলাকায় ডাইন অপবাদ দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ৪০ জনের বেশি জড়িতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
Tags Bardhaman BDO Block Development Officer Burdwan East Bardhaman East Burdwan Jamalpur Purba Bardhaman Raina Student witch Witch Hunting Witchcraft আক্রান্ত পুলিশ ওঝা জামালপুর ঝাড়ফুঁক ডাইন ডাইনি তুকতাক পূর্ব বর্ধমান বর্ধমান বিডিও রায়না
Check Also
বর্ধমানে আয়োজিত হলো পঞ্চম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হলো শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। রবিবার …