বর্ধমান, ২৪ জানুয়ারিঃ-এক এইচ আই ভি পজিটিভকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাঁরই পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের স্ত্রী বেশ কয়েকবার বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, অভিযোগ পর্যন্ত নেয়নি থানা। বাধ্য হয়ে পুলিশের উপর মহলে ঘটনার কথা জানান তিনি। তাসত্ত্বেও সক্রিয় হয়নি পুলিশ। শেষ মেশ বিচার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মৃতের স্ত্রী। বুধবার বর্ধমানের সিজেএম আদালতে মামলা করেছেন তিনি। কেস শুরু করে তদন্তের জন্য বর্ধমান থানার আই সি –কে নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি। অভিযোগের বিষয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট পেশেরও নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে থানা। কেউ এধরনের অভিযোগ জানাতেই আসেননি। অভিযোগ জানাতে এলে তা গ্রহণ করে অবশ্যই আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হত বলে থানার এক অফিসার জানিয়েছেন।
বর্ধমান শহরের সুকান্ত পল্লির ওই গৃহবধূ আদালতে জানিয়েছেন, বছর আটেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। স্বামী এইচ আই ভি পজিটিভ হওয়ায় তাঁদের উপর নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন চালানো হত। শ্বশুর বাড়িতেই তাঁদের আলাদা জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হয়। গত ১৪ অক্টোবর তাঁকে মারধর করে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও স্বামী বাড়িতেই থাকতেন। বিতারিত হয়ে তিনি রায়না থানার নাড়ুগ্রামে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ১৮ অক্টোবর বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরছিলেন। রাস্তায় দেখতে পেয়ে শ্বশুর বাড়ির একজন তাঁকে জানান, তাঁর স্বামী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে স্বামীর আত্মহত্যার কারন জানতে চাইতে গেলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁকে বেধড়ক পেটায়। স্বামীর মতো তাঁকেও মেরে টাঙিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। মারধরের ফলে তিনি জখম হন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’দিনের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হন। তাঁকে না জানিয়েই ১৯ অক্টোবর তাঁর স্বামীর দেহ সৎকার করে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
মৃতের স্ত্রী বলেন, স্বামীর এইচ আই ভি পজিটিভ হওয়ার কথা জানতে পেরে প্রথম পক্ষের স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। রোগের কথা গোপন করেই আমার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। শ্বশুর বাড়িতে স্বামীকে এবং আমাকে রোগের কারনে ঘৃনা করা হত। সম্পত্তির লোভেই আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁর আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, বিষয়টি পুলিশের সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত ছিল। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, এধরনের ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আদালতের নির্দেশের কথা জানিনা। তবে, আদালতের নির্দেশ মেনে ঘটনার বিষয়ে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।