মেমারি ও কাটোয়া, ১১ ফেব্রুয়ারিঃ- একই দিনে বর্ধমান জেলার কাটোয়া এবং মেমারি থানা এলাকায় দুটি কারখানায় দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটল। ডাকাতির ঘটনায় কারখানার কর্মী এবং মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় আইন শৃঙ্খলার প্রশ্নে শিল্পোদ্যোগীদের কাছে অন্যরকম বার্তা পৌঁছাবে। এর ফলে, শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে এবং নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান। ইদানীং জেলায় চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন কয়েক আগে বর্ধমান থানার জগৎপুরে দু’টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। খন্ডঘোষের একটি রাইসমিলেও ডাকাতি হয়। জগৎপুরের ঘটনার এখনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। খন্ডঘোষে রাইসমিলে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করলেও ডাকাতির মালপত্র উদ্ধার হয়নি। ধৃতদের পুলিশি হেপাজতেও নেওয়া হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে পরপর কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে ৩০-৩৫ জনের একটি ডাকাত দল মেমারি থানা এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে পালশিট রেলওভার ব্রিজের কাছে নির্মীয়মান একটি কাগজ কারখানায় হানা দেয়। দুষ্কৃতীরা লরিতে চেপে এসেছিল। লরিটিকে কারখানার গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে ১০-১২ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে। কারখানার দুই নিরাপত্তা রক্ষীর কপালে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁদের কারখানার ভিতরে নিয়ে যায়। নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়েই কারখানার অফিস ঘরে থাকা অন্যকর্মীদের ঘুম ভাঙায়। অফিস ঘরের দরজা খোলামাত্র ডাকাতরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে অপর চার কর্মীকে ভয় দেখায়। এরপর নিরাপত্তা রক্ষী এবং কর্মীদের হাত-পা বেঁধে অফিস ঘরের মধ্যেই ফেলে রাখে। ডাকাতরা নিরাপত্তা রক্ষীদের বাঁশি কেড়ে নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করতে তা বাজাতে থাকে। ডাকাতরা নির্মীয়মান কারখানার এসি মোটর, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, তার, লোহা, নগদ ৩৫-৪০ হাজার টাকা, কয়েকটি মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেয়। মালপত্র সঙ্গে নিয়ে আসা লরিতে চাপিয়েই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। মিলেরই এক কর্মী তাঁর মোবাইল লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। তিনিই ফোন করে মালিককে ঘটনার কথা জানান। কারখানার মালিক সমর হাজরা বলেন, দুষ্কৃতীদের কাছে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজন হিন্দিতে কথা বলছিল। এই ঘটনায় কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এনিয়ে মেমারি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। অন্যদিকে, সেদিনই রাতে কাটোয়া থানার জাজিগ্রামে একই কায়দায় একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় লুটপাট চালায় ৩০-৩৫ জনের একটি ডাকাত দল। একটি টাটা ৪০৭ গাড়িতে চেপে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। কর্মীদের মারধর করে দুষ্কৃতীরা কারখানা থেকে অ্যালুমিনিয়াম শিট, একটি মোটর চালিত ভ্যান, একটি পাম্প, নগদ টাকা এবং কয়েকটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালায়। মইয়ের সাহায্যে কারখানার অ্যাসবেসটসের ছাউনি ভেঙে ডাকাতরা কারখানায় ঢোকে। ঘণ্টা খানেকের অপারেশান সেরে মালপত্র ছোট লরিতে চাপিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। কারখানারই এক কর্মী মালিক এবং পুলিশকে কারখানায় ডাকাতির ঘটনার কথা জানান। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই ডাকাতির কিনারা সম্ভব হবে।