বর্ধমান, ১৪ জুনঃ- বর্ধমানে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা এবং জেলা নেতা কমল গায়েন-কে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পতিত পাবন তা জেল থেকে ছাড়া পেলেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস এবং বিচারপতি সুবল বৈদ্যকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেন। হাইকোর্টের সেই নির্দেশের কপি শুক্রবার বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করেন অভিযুক্তের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস। এর পরই ৩০ হাজার টাকার বন্ডে ধৃতের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেন সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি। জামিন মিললেও এখনই বাড়িতে ফেরা হচ্ছেনা পতিত পাবনের। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে আপাতত জেলার বাইরে থাকতে হবে। কেবলমাত্র আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য তিনি বর্ধমানে ঢুকতে পারবেন। যেখানে থাকবেন সেই এলাকার থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে সপ্তাহে একদিন হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। গ্রেপ্তার হওয়ার ৪৭৭ দিন পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পেলেন। এদিন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দলের কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে স্বাগত জানান। তাঁকে নিয়ে সংশোধনাগার চত্ত্বর থেকে মিছিলও বের হয়। দুই সিপিএম নেতার খুন হওয়ার পর তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা ঘটনায় দলের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। যদিও সি আই ডি –র পেশ করা চার্জশিটে রাজনৈতিক সংঘর্ষের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি এদিন পতিতপাবনকে ঘিরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের উচ্ছাস ঘটনার সঙ্গে দলের যোগসূত্রকেই প্রমাণ করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পতিত পাবনের জেল থেকে মুক্তি পাওয়া সিপিএমের শক্তঘাঁটি উত্তর বর্ধমানে তৃণমূলকে অক্সিজেন যোগাবে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে দেওয়ানদিঘি এলাকায় পার্টি অফিসের সামনেই দুই সিপিএম নেতাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রদীপ বাবুর ভাই প্রবীর তা বর্ধমান থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার আগেই ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পতিত পাবন সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিয়ে সি আই ডি আরও ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। যদিও এফ আই আরে নাম থাকা ৮ জন এখনও ধরা পড়েনি। তদন্ত সম্পূর্ণ করে সেই বছরেরই ৯ মে ধরা না পড়া ৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেন সি আই ডি-র তদন্তকারী অফিসার। চার্জশিট থেকে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ তা-র জামাতা তাপস গুপ্ত, তাঁর ছেলে সাহেব গুপ্ত এবং সিদ্ধেশ্বর হাজরা ওরফে টাকির নাম বাদ যায়। এনিয়ে আপত্তি জানান কেসের অভিযোগকারী। শুনানির পর ৩ জনের নাম বাদ যাওয়ার বিষয়ে ফের সি আই ডি তদন্তের নির্দেশ দেন সিজেএম। বর্ধমান জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিডি) উপর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১১ জুন এবিষয়ে সিজেএম আদালতে রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল তদন্তকারী অফিসারের। কিন্তু, এখনও তদন্ত সম্পূর্ণ করতে পারেনি ডিডি। এবিষয়ে রিপোর্ট পেশ করে আরও একমাস সময় চেয়েছেন ডিডি-র তদন্তকারী অফিসার। তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়ায় দ্রুত এই মামলার বিচার শুরু হওয়া সম্ভব নয়। সেই যুক্তি বিচার করেই এর আগে ৩ বার জামিন বাতিল করলেও এবার তা মঞ্জুর করেছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।