বর্ধমান, ২৯ জানুয়ারিঃ- তদন্তভার হাতে নেওয়ার বছর খানেক পরও আউশগ্রাম থানার বেলারি গ্রামে মামার বাড়ি থেকে অপহৃত স্কুল ছাত্র বলরাম নাগের হদিশ দিতে ব্যর্থ সি আই ডি। ছেলের হদিশ পেতে বাবা-মা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। প্রশাসনের তরফে শুধুই আশ্বাস মিলছে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকায় হতাশ অপহৃতের পরিবারের লোকজন। সি আই ডি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে অপহৃতের বাবা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সি আই ডি -র পরিবর্তে সি বি আই তদন্ত দাবি করেছেন তিনি হাইকোর্টে। সি আই ডি অবশ্য অপহৃতকে খুঁজে বের কারার ব্যাপারে ব্যর্থতার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থার এক অফিসার বলেন, অপহরণের ঘটনার বছর দেড়েক পর পুলিশের হাত থেকে তদন্তের দায়িত্ব আমাদের হাতে আসে। অপহরণে জড়িত সন্দেহে পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ধৃতদের পুলিশি হেপাজতেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ধৃতদের কাছ থেকে কোনও ক্লূ পুলিশ পায়নি। ফলে, তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। ধৃতদের ফের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আইনি বাধা আছে। তাই, তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা। যে কারনে ছেলেটির হদিশ পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে, ছেলেটিকে খুঁজে বের করার সব রকম চেষ্টা চলছে।
সি আই ডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সকালে বেলারি গ্রামে মামার বাড়ি থেকে অপহৃত হয় বলরাম নাগ (১১)। সে বাঁকুড়ার কোতলপুরের লাউগ্রাম নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে পঞ্চম শ্রেনিতে পড়ত। সেদিনই রাত ৮ টা নাগাদ গ্রামেরই ধর্মরাজ মুড়ি কারখানায় একটি ফোন আসে। অপহরণকারীরা কারখানার মালিককে অপহৃতের পরিবারের লোকজনকে ডেকে দিতে বলে। অপহৃতের বাবা ফোন ধরলে অপহরণকারীরা তাঁর কাছে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে, অন্যথায় ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। মুক্তিপণ চেয়ে ফোনের ব্যাপারে বলরামের বাবা সেদিনই আউশগ্রাম থানায় জানান। কিন্তু, থানা বিষয়টিকে বিশেষ আমল দেয়নি। উলটে ছেলেকে লুকিয়ে রাখার অভিযোগে গ্রামেরই কয়েকজন অপহৃতের বাবাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আউশগ্রাম থানার লকআপে দু’দিন আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য অপহৃত ছাত্রের বাবার অভিযোগ জমা নেয় থানা। যদিও অভিযোগে কয়েকজনের নাম জানাতে চাইলে পুলিশ কোনও নাম ছাড়াই তাঁকে অভিযোগ লিখতে বাধ্য করে। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামেরই কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও অপহৃতের হদিশ দিতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।
ছেলেকে ফিরে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালের কাছে সি আই ডি তদন্ত চেয়ে আরজি জানান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সি আই ডি -র হাতে তদন্তের দায়িত্ব যায়। সি আই ডি তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর প্রায় দেড় বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু, অপহৃত কিশোর এখনও উদ্ধার হয়নি। নতুন করে কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। বলরামের বাবা কার্তিক কুমার নাগ বলেন, সি আই ডি কিছুই করছেনা। ছেলেকে উদ্ধার দূরে থাক, কোথায়, কী অবস্থায় সে আছে তাও জানাতে পারছেনা। সি আই ডি তদন্তে বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। তাই, সি বি আই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলামনা। তাই এনিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।