বর্ধমান, ২৫ জানুয়ারিঃ-ঘরে ফিরে সংবর্ধনার জোয়ারে ভাসল বর্ধমানের সোনার মেয়ে জয়শ্রী পাত্র। শুক্রবার দুপুরে বিমানে ব্যাঙ্কক থেকে দমদমে ফেরে বিশ্ব যোগ প্রতিযোগিতায় ১৫ থেকে ১৯ বছরের মহিলা বিভাগে সোনা জয়ী জয়শ্রী। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে হাওড়া স্টেশনে এসে লোকাল ট্রেনে বর্ধমানে। এদিন বিকাল পাঁচটা নাগাদ ট্রেনটি বর্ধমান স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে নামামাত্র তার ক্লাব অঙ্কুশের তরফে সংবর্ধিত করা হয় তাকে। পরে জেলা পুলিশের তরফে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। একই সঙ্গে বিশ্ব যোগ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে পুরস্কার জেতা তার দাদা পূর্ণজ্যোতি পাত্রকেও সংবর্ধিত করা হয় জেলা পুলিশের তরফে। সোনার মেয়েকে রিসিভ করতে উপস্থিত ছিলেন তার পরিবারের লোকজনও। পরে পুলিশের গাড়িতে তাদের শহরেরই উত্তর ফটকের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। জেলা পুলিশ লাইনে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন অনুষ্ঠানে জয়শ্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও ঘোষনা করেছেন জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা। আন্তর্জাতিক আসরে সোনা জিতে বেজায় খুশি জয়শ্রী। সে বলে, এক সময় অর্থের কারনে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছিল। পরে রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্র, জেলা শাসক ওঙ্কার সিং মীনা, পুরপতি আইনূল হক এবং বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারি। দেশকে সোনা এনে দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আগামী দিনে দেশকে যাতে আরও পদক এনে দিতে পারি সে ব্যাপারে চেষ্টা থাকবে। দেশকে পদক এনে দিয়েও একটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে জয়শ্রীর। দীর্ঘদিন তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। প্রশাসন এব্যাপারে উদ্যোগী হলে সমস্যা মিটতে পারে বলে আশা।
জয়শ্রীর এই সাফল্য কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি। মাত্র সাড়ে ৩ বছর বয়সে যোগ –এ হাতে খড়ি তার। ‘অঙ্কুশ’ ক্লাবে প্রশিক্ষক শ্যামল বিশ্বাসের প্রশিক্ষনে যোগ চর্চা শুরু করে সে। শুরুর কিছুদিন পর থেকেই মিলতে থাকে সাফল্য। স্থানীয় প্রতিযোগিতায় একের পর এক সাফল্য পায় সে। ২০০৭ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল গেমসে প্রথম হয় সে। ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড সোসাইটির ১৭ তম সর্বভারতীয় ইউ এন আই যোগ কম্পিটিশনে ওপেন গ্রুপে সে প্রথম হয়। বেস্ট অব বেস্টেও সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ২০১১ সালে স্কুল গেমসে প্রথম স্থান পায় সে। ২০১২ সালে রাজ্য স্কুল গেমসে যোগা বিভাগে এবং রিদমিক বিভাগেও সে সোনা জেতে। সেই বছরই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল গেমসেও যোগাসনে দ্বিতীয় এবং রিদমিক যোগে সে তৃতীয় স্থান দখল করে। একই বছরে হুগলীর চন্দন নগরে অনুষ্ঠিত যোগা ফেডারেশন আয়োজিত ইন্দো-নেপাল আন্তর্জাতিক যোগ প্রতিযোগিতায় নিজের বিভাগে সে প্রথম হয়। এরপর চূড়ান্ত সাফল্য। থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল যোগ কনফেডারেশন আয়োজিত ওয়ার্ল্ড কাপ যোগ চ্যাম্পিয়ানশিপে জাপান, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে সে প্রথম হয়। রিদমিক যোগে সে দ্বিতীয় স্থান পায়।
বর্ধমানের ভারতী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে জয়শ্রী। বাবা জয়দেব পাত্র জিনিসপত্র ফেরি করেন। তিন মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার। বাড়ি ওয়ালার সঙ্গে বিবাদের কারনে বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সেই সমস্যাকে দূরে ঠেলে খেলার পাশাপাশি পড়াশুনাও সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে সে। আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতীয় খেলোয়াড়দের সাফল্য যখন দূরবীন দিয়ে দেখতে হয় সেখানে জয়শ্রীর এই সাফল্য সত্যিই গর্বের।