বর্ধমান, ২৬ ফেব্রুয়ারিঃ- মেমারি থানার কলানবগ্রামের কোনার পাড়ায় নির্মীয় মান কাগজ কারখানায় ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ। সোমবার রাতে কলকাতার মানিকতলা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমানের এস ডি পি ও (সদর) অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বে মেমারি থানার পুলিশ ইস্ট ক্যানেল রোডের একটি লোহার গোডাউনে হানা দেয়। তল্লাশিতে গোডাউনটি থেকে কাগজ কারখানা থেকে লুট হওয়া বেশ কিছু মালপত্র উদ্ধার হয়। ডাকাতির মাল পাচারে ব্যবহৃত লরিটিকে শনাক্ত করে সেটিকেও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ডাকাতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে লরিটির চালক সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যে গোডাউনটি থেকে ডাকাতির মালপত্র উদ্ধার হয়েছে সেটির মালিককে অবশ্য পুলিশ ধরতে পারেনি। হানার খবর পেয়ে আগেভাগেই সে কেটে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম মনিলাল যাদব ওরফে মুন্নালাল, সুভাষ সাউ এবং রহমান যাদব। মনিলাল এবং রহমানের বাড়ি উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলায়। বর্তমানে তারা মানিকতলা থানা এলাকায় থাকে। মনিলাল ডাকাতির মাল বহনে ব্যবহৃত লরিটির চালক। রহমান ডাকাতির সময় মালপত্র বহনের কাজ করে। মানিকতলার লোহাপট্টি এলাকায় সুভাষের বাড়ি। সে চোরাই মালপত্র কেনা-বেচায় মিডল ম্যানের কাজ করে। মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। ডাকাতিতে জড়িত বাকিদের হদিশ পেতে এবং বাকি মালপত্র উদ্ধারের জন্য মনিলাল এবং সুভাষকে ১০ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি দুজনকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রহমানকে ৪ মার্চ পর্যন্ত জেল হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন সিজেএম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ৩৫-৪০ জনের একটি ডাকাত দল কোনার পাড়ার নির্মীয়মান কাগজ কারখানাটিতে হানা দেয়। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে কারখানার নৈশপ্রহরীদের নিরস্ত্র করে তাঁদের বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। নৈশ প্রহরীদের নিয়েই কারখানার অফিস ঘরে যায় ডাকাতরা। তাঁদের দিয়েই কারখানার অন্য কর্মীদের ঘুম থেকে তোলে দুষ্কৃতীরা। এরপর কর্মীদেরও অফিস ঘরে বেঁধে রেখে লুটপাট চালায় ডাকাতরা। কারখানার বেশ কয়েকটা মোটর, ভালভ, তামার তার, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম শিট, কর্মীদের মোবাইল ফোন এবং টাকা নিয়ে লরিতে চাপিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পরের দিন কারখানাটির মালিক মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকা থেকে একটি লরি বাজেয়াপ্ত করে। লরিটির চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মেমারির কারখানাটিতে ডাকাতির ব্যাপারে কিছু সূত্র পায়। যদিও ধৃত চালক কাগজ কারখানাটিতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত নয় বলে পুলিশ জানতে পারে। চালকের দেওয়া সূত্র অনুসারে তদন্ত চালিয়ে বেশ কিছু ক্লু পায় পুলিশ। পরে মোবাইলের সূত্রকে কাজে লাগিয়ে ডাকাতির ঘটনায় ধৃতদের জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ। সেইমতো ইস্ট ক্যানেল রোডের লোহাপট্টি এলাকায় লোহার গোডাউনটিতে হানা দেয় পুলিশ। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ডাকাতির কিনারা সম্ভব হয়েছে। ডাকাতির কিছু মালপত্র উদ্ধারও হয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের হদিশ পেতে ধৃতদের পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয়েছে।