বর্ধমান, ৫ ফেব্রুয়ারিঃ- বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা গেলনা। তাই, উন্নততর চিকিৎসার জন্য বিচার বিভাগীয় হেপাজতে থাকা শেখ কওসর আলিকে কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হল। সেখান থেকেই এস এস কে এম হাসপাতালে রেখে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সোমবারই বর্ধমান হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে কারণে মঙ্গলবার তাকে বর্ধমানের সিজেএম আদালতে পেশ করতে পারেনি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। ধৃত সিপিএম নেতাকে পেশ করতে না পারার বিষয়টি এদিনই আদালতে রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছেন সংশোধনাগারের সুপার। আদালতের নির্দেশ মেনে হাসপাতালের চিকিৎসকের রিপোর্টও জমা দিয়েছেন জেল সুপার। কিন্তু, কেন বর্ধমান হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা গেলনা ধৃত সিপিএম নেতার? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। বিকল্প মেশিনের ব্যবস্থাও করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই, হাসপাতালের চিকিৎসকের সুপারিশ মেনে কলকাতার এস এস কে এমে চিকিৎসার জন্য আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আপাতত রাখার ব্যবস্থা হয়েছে সিপিএম নেতার।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি ভোরে রায়না থানার পলেমপুরের বাড়ি থেকে সিপিএমের রায়না জোনাল কমিটির সদস্য কওসর এবং তার সঙ্গী আলাউদ্দিন কাজিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃত সিপিএম নেতার বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কারতুজ উদ্ধার হয় বলে পুলিশের দাবি। ধৃতদের ৭ দিন পুলিশি হেপাজতেও নেওয়া হয়। পরে ধৃতদের দেখানো জায়গা থেকে কারবাইন, পিস্তল, কারতুজ উদ্ধার করে পুলিশ। গত শুক্রবার ধৃতদের আদালতে পেশ করা হয়। মাধবডিহি থানার কাইতিতে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুনের মামলায় কওসরকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার জন্য সেদিনই আবেদন জানায় পুলিশ। কিন্তু, ধৃতের আইনজীবীরা পুলিশি হেপাজতের বিরোধীতা করে সওয়াল করেন। আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানান, বুকে ব্যাথা অনুভব করায় রায়না হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে বর্ধমান হাসপাতালে দেখানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু, সেই পরামর্শ মানা হয়নি। সওয়াল শুনে সিজেএম সেলিম আহমেদ আনসারি বর্ধমান হাসপাতালে কওসরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দেন। সেইমতো ১ ফেব্রুয়ারি ধৃত সিপিএম নেতাকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ডাঃ অমিত সরকার ধৃত সিপিএম নেতার চিকিৎসা করেন। ডাঃ অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কার্ডিওলজি বিভাগের অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে ধৃত সিপিএম নেতার চিকিৎসা করেন তিনি। ধৃত সিপিএম নেতা বুকের বাঁদিকে ব্যাথার কথা জানিয়ে হৃদরোগের কথা চিকিৎসকদের বলেন। সেজন্য অভিযুক্ত সিপিএম নেতার বুকের এক্সরে, ট্রপ-টি টেস্ট করানো হয়। যদিও তাতে তেমন কিছু সমস্যা ধরা পড়েনি। হৃদরোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে তার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু, মেশিন খারাপ থাকায় তা করা যায়নি। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ অসিতবরণ সামন্ত বলেন, অনাময় হাসপাতালে থাকা ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই, এখানে টেস্টটি করানো যায়নি। তবে, ধৃত সিপিএম নেতার এক্স-রে এবং ট্রপ-টি টেস্টে হার্টের কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি। এরপরই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, সবই তো বোঝেন। এদিকে জেল সুপারের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সিপিএম নেতাকে ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।