বর্ধমান, ১৬ ফেব্রুয়ারিঃ- গার্ডেনরিচ কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করল সি আই ডি। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সি আই ডি তাদের গ্রেপ্তার করে। দিল্লিগামী ট্রেন ধরার অপেক্ষায় ছিল তারা। ধরার পর তিনজনকে স্টেশনের বাইরে আনেন সি আই ডি-র অফিসাররা। প্ল্যাটফর্ম থেকে গার্ডেনরিচ কান্ডে জড়িত তিনজনের ধরা পড়ার ঘটনায় স্টেশন চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। ধৃতদের দেখতে এলাকায় ভিড় জমে যায়। এনিয়ে উৎসাহীরা সি আই ডি -র অফিসারদের কাছে প্রশ্নও তোলে। নিরুত্তর থেকে অপারেশন সেরে ধৃতদের দু’টি টাটা সুমোতে নিয়ে দ্রুত কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সি আই ডি-র টিম। অত্যন্ত গোপনে এই অপারেশন চালায় সি আই ডি। অভিযানের বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয় বর্ধমান থানা এবং রেলপুলিশকে। এমনকি জেলার পুলিশ সুপারকেও অপারেশনের আগে ও পরে কিছুই জানানো হয়নি। এনিয়ে পুলিশ মহলের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তিনজনকে রায়না থানা এলাকা থেকে ধরা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে যায়। তিনজনকে ধরার বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সি আই ডি কর্তারা। তবে, তিনজনকে যে বর্ধমান স্টেশন থেকেই ধরা হয়েছে তা স্বীকার করেছেন অভিযানে অংশ নেওয়া এক অফিসার। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানা নেই। তাই, কোথা থেকে তিনজনকে ধরা হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়।
সি আই ডি সূত্রে জানা গিয়েছে, গার্ডেনরিচ কান্ডে এর আগে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় চুড়ি ফিরোজ, মহম্মদ শাকিল এবং মহম্মদ রাজের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে সি আই ডি। বিভিন্ন সূত্রে তিন জনেরই মোবাইল নম্বর যোগাড় করে সি আই ডি। এরপরই মোবাইলে আড়ি পেতে তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হয়। মোবাইলে আড়ি পেতে সি আই ডি জানতে পারে, ঘটনার পরই তারা হাওড়ায় আত্মগোপন করে। গার্ডেনরিচ কান্ডে জড়িতদের ধরার ব্যাপারে সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি জানতে পেরেই ভিনরাজ্যে পালানোর পরিকল্পনা করে তিনজন। সেইমতো শুক্রবার সন্ধ্যাতেই তিনজন লোকাল ট্রেনে বর্ধমানে চলে আসে। সি আই ডি-র টিমও তাদের পিছু নেয়। সি আই ডি -র অফিসাররা তিনজনকে চিনতেন না। তাই, গার্ডেনরিচ থানার এক এ এস আই কেও অভিযানে সঙ্গে নেয় সি আই ডি। তবে, এলাকার পুলিশ অফিসারকে যাতে ফিরোজ, শাকিল এবং রাজ চিনতে না পারে তাই তাঁকে বোরখা পরানো হয়। বর্ধমানে পৌঁছে তিনজন কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট কাটে। দানাপুর এক্সপ্রেসে তাদের প্রথমে ঝাড়খন্ডে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে কিছুদিন আত্মগোপনের পর তাদের দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। টিকিট কাটার পর তারা প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মাঝে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তারা। ট্রেন আসতে বিলম্ব আছে বলে পরিবারের লোকজনকে জানায় তারা। আড়ি পেতে তাদের গতিবিধি এবং কথাবার্তা শোনেন গোয়েন্দারা। রাত পৌনে ৯ টা নাগাদ ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে হানা দেন সি আই ডি -র অফিসাররা। দূর থেকে তিনজনকে শনাক্ত করেন গার্ডেনরিচ থানার অফিসার। যদিও তাতেও কিছুটা ভূল হয় গোয়েন্দাদের। প্রথমে অন্য একজনকে ধরে ফেলেন অফিসাররা। বিষয়টি জানতে পেরে কয়েকজন প্রতিবাদ করায় গোয়েন্দারা ক্ষমা চেয়ে নেন। পরে চাদর জড়িয়ে পাশাপাশি বসে থাকা তিনজনকে ধরে ফেলে সি আই ডি-র টিম। ধরার পর দ্রুত তাদের স্টেশনের বাইরে আনা হয়। তারপর মিনিট পনেরোর অপেক্ষা। স্টেশন থেকে দূরে দাঁড় করানো গাড়ি পৌঁছে যায় ঘটনা স্থলে। গাড়িতে চাপিয়ে স্টেশন চত্বর ছাড়ে সি আই ডি -র ৭-৮ জনের টিম। সেখান থেকে মেমারির পাশাপাশি হোটেলে হালকা খাওয়া দাওয়ার পর সোজা ভবানী ভবনে পৌঁছায় সি আই ডি -র টিম।