বর্ধমান, ৪ ফেব্রুয়ারিঃ- বিচার বিভাগীয় হেপাজতে থাকা এক দাগি আসামী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম রহস্য দেখা দিয়েছে বর্ধমানে। গত ২২ জানুয়ারি অপহরণের একটি মামলায় তাকে বর্ধমানের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করা হয়। সেই কেসে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তার জামিন মঞ্জুর করে। যদিও তার বিরুদ্ধে আরও ৩ টি খুনের মামলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও একটি মাত্র কেসে জামিন পেয়েই সে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপরই সে গা-ঢাকা দেয়। হন্যে হয়ে খুঁজেও তার হদিশ পায়নি পুলিশ। বিচারবিভাগীয় হেপাজতে থাকা এক দাগি আসামীর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে রহস্য দানা বেধেঁছে। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি বিচারাধীন বন্দির পলায়ন নিয়ে কেউ কেউ অন্য রকম রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করার সময় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা আছে কীনা তা কাস্টডি ওয়ারেন্টে লেখা থাকার কথা। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ হওয়ার আগে কাটোয়া সংশোধনাগারে ছিল অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে তা কাটোয়া সংশোধনাগার থেকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করার সময় জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কীভাবে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কর্মীরা তাকে ছেড়ে দিল তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ করা যাবেনা এই শর্তে জাস্টিস বোর্ডের এক কর্মী বলেন, এখানে যে মামলায় অভিযুক্তকে পেশ করা হয়েছিল তা সে জামিন পেয়ে যায়। অন্য মামলাতেও যে সে অভিযুক্ত সেই সংক্রান্ত কোনও নথি বোর্ডের কাছে পেশ করা হয়নি। তাই, জামিন পাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কাটোয়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে এক নাবালিকাকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকা ছাড়াও আরও ৩ টি খুনের মামলা রয়েছে কাটোয়ার খাজুরডিহির সাদ্দাম শেখ ওরফে সদাইয়ের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন সে গাঢাকা দিয়েছিল। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গত ৩ জানুয়ারি তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। খুনের মামলা গুলিতেও তাকে পুলিশি হেপাজতেও নেওয়া হয়। পুলিশি হেপাজতের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাকে জেল হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেয় কাটোয়ার এসিজেএম আদালত। সেইমতো সাদ্দামকে কাটোয়া সংশোধনাগারে রাখা হয়। অপহরণ মামলাটি যখন শুরু হয় সেই সময় নাবালক ছিল সাদ্দাম। তাই, সেই মামলায় তাকে বর্ধমানের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পেশ করা হয়। জাস্টিস বোর্ড তাকে আড়িয়াদহ ধুবাশ্রমে রাখার নির্দেশ দেয়। সেখান থেকে ২২ জানুয়ারি তাকে ফের জুভেনাইল বোর্ডের সামনে হাজির করা হয়। তার হয়ে আইনজীবী চয়ন মখোপাধ্যায় জমিন চেয়ে সওয়াল করেন। বোর্ড তার জামিন মঞ্জুর করে। কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস বলেন, সাদ্দাম দাগি আসামী। কীভাবে সে ছাড়া পেল বুঝতে পারছিনা। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার গাফিলতিতে সে পালাল তা বলা সম্ভব নয়। অভিযুক্ত পালিয়ে যাওয়ায় বিচার বিলম্বিত হবে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ৫ টি কেসের কাস্টডি ওয়ারেন্টই জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কীভাবে জেলে না পাঠিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হল তা অত্যন্ত বিস্ময়কর। পলাতককে ধরার চেষ্টা চলছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।